শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মধুপুরে সুমী নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলার ২নং গোপালপুর ইউনিয়নে আইন শৃংখলার ব্যাপক অবনতি। শ্যামনগরে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ।  জগন্নাথপুরে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষেত্র সহকারীর বদলী জনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মধুপুরে তারুণ্যের উৎসব শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে  বিলাইছড়িতে ত্রৈ-মাসিক ইয়ুথ সভা বসতিতে ‘পানির সততা’ নিশ্চিত করতে ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত লালপুরে গরুর ট্রাক সহ গরু চোর আটক

নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ এর নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট আমাদের প্রত্যাশা অনেক।

লেখক: যীশু কুমার আচার্য্যঃ
  • Update Time : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৩ Time View

গত জুলাই মাস জুড়ে সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলে এবং এই আন্দোলন এর প্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘটে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন জাগে হঠাৎ কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ কেন ঘটল? আমরা সংবাদ মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, তাতে দেখলাম কোটা সংস্কার বা কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যে সকল ছাত্র বা চাকরি প্রত্যাশী ছিল তাদের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-কে নামানো হয়েছিল। পাশাপাশি আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল। সরকার কারফিউ জারী, সাধারণ ছুটি দিয়েও আন্দোলন দমাতে না পেরে পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন মতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কোটা বৈষম্য আন্দোলন আরো গতি লাভ করে এবং আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সাময়িকভাবে ভারতে গমন করেন। এর সাথে সাথে দেশজুড়ে নৈরাজ্য, ভাংচুর, লুটতরাজ সহ নানা অপরাধ ঘটে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন (গণভবন), সংসদ ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, সুধা সদন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অফিস, বিভিন্ন থানা, সরকারী অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারধর, হানাহানির মত ঘটনা ঘটে। এতকিছু ঘটার জন্য অনেকাংশে সদ্য বিদায়ী সরকারের নীতি-নির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতা/উপদেষ্টাগণ দায়ী। বিশেষ করে ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নামামো মোটেই সঠিক হয়নি এবং কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকালীন সময়ে জামায়েত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা মোটেও সঠিক হয়নি।
আমারা জানি যে, এই বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। যেই মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোক যেমন শহীদ হয়েছিল, তেমনি দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হানি হয়েছিল। সেহেতু সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিকতা যেমন রয়েছে, তেমনি কোটার নামে কোটার অপব্যবহারে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের অধিকারকেও খর্ব করা কোনোভাবে যৌক্তিক ছিলনা। অতীতে সরকারী চাকরিতে নিয়োগে ৫৬% কোটার আওতায় ছিল। অবশিষ্ট ৪৪% সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। বর্তমানে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তাহা ৭% স্থির করা হয়। কোটা বৈষম্য আন্দোলনে পক্ষে-বিপক্ষে বা নিরপেক্ষ অনেক লোক শাহাদাৎ বা মৃত্যুবরণ বরণ করেছে। অনেক লোক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকার নির্মমভাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। বর্তমানে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ এর নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালানা করছেন। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ এর নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তবে এই সরকারের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যাহা নিম্নরূপ:-
(১) আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতিরউন্নয়ন ঘটানো:- অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হল- আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা বা উন্নয়ন ঘটানো। লুটতরাজ, সাম্প্রদায়িক সহ বিভিন্ন হামলা রোধ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মীয় স্থাপনা ভাংচুর, প্রতিমা ভাংচুর সহ সকল বেআইনী কাজ রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। এই ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হল- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ পুলিশ এর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন কল্পে পুলিশকে সরকারের যথাযথ সহযোগিতা প্রদান অত্যাবশ্যক। যাতে বাংলাদেশ পুলিশ পূর্বের মত স্বাভাবিক গতিতে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
(২) অর্থনৈতিক অবস্থা আরো গতিশীল করা:- বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অনেক বৃদ্ধি। দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির কবলে বাংলাদেশ। এই অবস্থা হতে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

(৩) সাম্প্রতিক কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যে সকল ব্যক্তি শাহাদাৎ বা মৃত্যুবরণ করেছেন, উনাদের পরিবার বর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা এবং আন্দোলনে যারা আহত বা পঙ্গু হয়েছে তাদের প্রতি সমবেদনা, চিকিৎসার নিমিত্তে আর্থিক অনুদান ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা।
(৪) যে সকল পুলিশ বা আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য নিরস্থ আন্দোলনরত ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি যে সকল থানায় বা পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে ও পুলিশ-কে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিচারান্তে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা।
(৫) রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর সহ সকল প্রকার বে-আইনী কাজের যথাযথ বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা।
(৬) যত সহসায় সম্ভব সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় করণীয় স্থির করা এবং সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে সহসায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা।
(৭) মেট্রোরেল সহ বিগত সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্য যতটুকু সম্ভব চালিয়ে নেয়া।
(৮) দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতিরোধ, মুদ্রাস্ফীতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সহ বিবিধ কার্যাবলী সম্পাদন করা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পেয়েছি নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ স্যারকে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশবাসীর প্রত্যাশা এবং বিশ্বাবাসীর প্রত্যাশা যে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার যত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সম্ভব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন সরকারের মত এই অন্তবর্তীকালীন সরকার চাইনা, উনারা নানা যুক্তিতে দীর্ঘ দুই বছর সময় ক্ষেপন করে ক্ষমতায় ছিল এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতাসীন হলে উনারা বিদেশে বসবাস শুরু করে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ একজন নোবেল জয়ী বাঙালী এবং বাংলাদেশী। আমরা চাই উনার সুযোগ্য নেতৃত্বাধীন সরকারের উনি সহ প্রত্যেক উপদেষ্টা স্ব স্ব অবস্থান হতে কাজের মাধ্যমে নিজেদের সম্মান আরো বৃদ্ধি করবেন এবং যথাসময়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হলে অন্তবর্তীকালীন সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আমরা এমন কিছু আশা করিনা যে, উনি কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় অতিরঞ্জিত কিছু করে কোনো দলের ক্ষতি করবেন বা কোনো বিশেষ শ্রেণী বা গোষ্ঠীর সমালোচনার সম্মুখীন হবেন। যেহেতু এই সরকার একটি অরাজনৈতিক সরকার; সেহেতু রাজনৈতিক সরকারের ন্যায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলকে দাবিয়ে রেখে বা ক্ষতিগ্রস্থ করে সমালোচিত ও বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না বলে আমাদের প্রত্যাশা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বে সমাদৃত প্রথিতযশা নোবেল জয়ী ব্যক্তি। অতীতে উনার উপরে যথেষ্ট অবিচার হয়েছে যাহা খুবই দু:খজনক ও অসম্মানজনক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার নামক অস্থায়ী এই সরকারটির নামকরণ প্রথমত: আমার চিন্তা-ধারা হতে বের হয় এবং আমি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এই বিষয়ে আমার ফেসবুক আই.ডি.-তে স্টাটাস দিয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে আমার প্রস্তাবিত নামকরণে অরাজনৈতিক অন্তবর্তীকালীন সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন এবং এই সরকারের বেশ কয়েকজন প্রজ্ঞাবান উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ স্যার রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদে উপদেষ্টাগণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে অতীতে সফলতা দেখিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা যে, উনাদের সুযোগ্য, বলিষ্ট, সুদৃঢ় নেতৃত্বে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। আগামীর বাংলাদেশ হোক সুন্দর, অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা, হিংসা, বিদ্বেস, হানাহানিমুক্ত। এদেশ হোক মানুষের নিরাপদ বাসযোগ্য। এদেশ হোক কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতে স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশ। পরিশেষে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সার্বিক সফলতা কামনা করি।
— লেখক: যীশু কুমার আচার্য্য, আইনজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিক। সদস্য- অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102