ফেনী ও কুমিল্লার পরে নোয়াখালীতেও ধীরে ধীরে বাড়ছে বন্যার পানি। জেলার প্রায় সকল উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লাখ লাখ মানুষ । এতে বেশির ভাগ বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে ।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাটখিল উপজেলার প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ পানিবন্দি। বাড়িঘর ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। নিচু এলাকায় ঘরের চালার কাছাকাছি পর্যন্ত পানি।
বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় গতকাল রাত পর্যন্ত অনেকে খাটের ওপর অবস্থান করেন। তবে আজ বুধবার সকাল থেকে তারা কাছের আশ্রয়ণ কেন্দ্র, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
চাটখিল উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, বন্যার পানিতে গত মঙ্গলবার তার একটি মুরগির খামারে প্রায় ৫ লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে এবং চাষকরা মাছগুলো বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস জানান, এবারের বন্যায় চলতি আমন ও আউশ মৌসুমে জেলায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৬ হেক্টর আমনের বীজতলা, আবাদকৃত আমনের ক্ষতি হয়েছে ২৬ হাজার ৯০০ হেক্টর। এ ছাড়া আবাদকৃত আউশের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমি। বন্যায় আমন ও আউশের পাশাপাশি সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে ৮৭টি এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। জেলা প্রশাসক আরও জানান, বন্যায় চলামান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিকটন চাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে ৪৫টন চাউল এসেছে সেটা ইউনিয়ন পর্যায়ে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গাতে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। গত দুই দিনে চাটখিল আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩০০০ মানুষ ছিল আজ তা ১০ হাজারে পরিনত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ বাড়ছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ।
এদিকে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বন্যায় কবলিত মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছেন সেচ্ছাসেবী বেশ কয়েকটি সংগঠন। তারা বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গিয়ে বন্যার্থ মানুষর মাঝে মুড়ি, বিস্কুট, চিড়া ও বিশুদ্ধ খাবার বিতরণ করছেন।