বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নোয়াখালীতে দুস্থ শীতার্তদের কম্বল দিয়েছে বিকল্প ধারা সবুজ বাংলা ব্লাড ব্যাংক আয়োজিত ফাইভ নাইট ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ লালপুরে বিএনপির উদ্দ্যোগে সন্ত্রাস বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ  বিলাইছড়িতে খামারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান বিলাইছড়িতে পালবার লিংসেন্টার পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বিলাইছড়িতে কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি’র সঙ্গে মত বিনিময় করলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ আজ সাতসকালে কলকাতাতেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তিনবার লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রসহ যুবক গ্রেফতার, পরিবারের দাবী ফাঁসানো হয়েছে গভীর সমুদ্রে ভেসে যাওয়া 95,জন মৎস্যজীবী কে বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করে তাদের সাথে সাক্ষাৎ মমতার

গাজীপুরে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকের বিরুদ্ধে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪
  • ৮৯ Time View

দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া গাজীপুর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজস করে জাল কাগজপত্র দিয়ে সরকারি খাসজমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার গোবিন্দবাড়ি মৌজার সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ব্যক্তি মালিকানায় দেখিয়ে উপরন্তু জমির নামজারি জমাভাগের জাল সনদ, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের জাল রশিদ, এবং ভুয়া জোতের তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

এ সংক্রান্ত সব ধরনের নথি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

দলিল সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি থানার কোনাবাড়ি গ্রামের মো. জহির উদ্দিনের ছেলে মো. নাজিম উদ্দিন দলিল গ্রহীতা বা জমিটির ক্রেতা দেখানো হয়। গাজীপুর জেলার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার এনায়েতপুর গ্রামের মোতালেব মিয়া সিকদারের ছেলে মো. ইব্রাহিম মিয়া সিকদার ও মো. আমজাদ হোসেন সিকদার, মেয়ে লিলি আক্তার ও লাইলী বেগম এবং স্ত্রী জহুরা খাতুনকে দলিল দাতা বা জমিটির বিক্রেতা দেখানো হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির বিতর্কিত সদস্য গাজীপুরের সদর থানার আদাবৈ গ্রামের মো. হালিম ভূঁইয়া (সনদ নম্বর ৪৪৫) অভিযুক্ত একটি দলিল সম্পাদনের প্রক্রিয়া করেন।

দলিলে ২৩.৬৮ (তেইশ দশমিক ছয় আট) শতাংশ জমির মূল্য দেখানো হয় ৭৯,০০,০০০.০০ (ঊনআশি লাখ) টাকা। প্রকৃতপক্ষে, এই জমির বাজার মূল্য আরও অনেক বেশি। এতে দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া ও সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ক্ষতি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জমি রেজিস্ট্রির নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে উল্লেখ আছে, “২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণে দেখা যায়, যেহেতু নিম্ন তফসিল বর্ণিত গোলেজারন নেছা বিগত আরএস রেকর্ডে নিজ নাম সঠিক ও শুদ্ধরূপে রেকর্ডভূক্ত করাইয়া মালিক নিয়ত থাকিয়া বিগত ইংরেজী ২৭/৭/১৯৬৮ তারিখে ০৭/৬৮-৬৯ নং নথিমূলে ৯৫২ নং জোত খুলিয়া বার্ষিক খাজনাদি পরিশোধ করিয়া মালিক নিয়ত হন। অতঃপর গোলেজারন নেছা রেকর্ডীয় মূলে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় বিগত ইংরেজী ২৯/০৬/১৯৭৬ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ৩৮৬৮ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা -৩৩ শতাংশ জমি মো: আব্দুল গফুর মিয়া এর বরাবরে এবং বিগত ইংরেজী ২৯/০৬/১৯৭৬ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ৩৯০০ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা ২১৪.৫০ শতাংশ জমি মো: শাহজাহান খান বরাবরে হস্তান্তর করিয়া দিয়া নিঃস্বত্ববান হন। অতঃপর মো: শাহজাহান খান উক্ত ৩৯০০ নং সাফ কবলা দলিল মূলে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় বিগত ইংরেজী ১৮/১১/১৯৭৭ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ১ নং বহির ৫৪ নং ভলিউমের ১৮২ হইতে ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধীয় ৭২০৬ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা- ৭৫ শতাংশ জমি আব্দুল জলিল এর বরাবরে এবং বিগত ইংরেজী ১৮/১১/১৯৭৭ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ৭২০৭ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা- ৭৫ শতাংশ জমি রূপবান নেছা এর বরাবরে হস্তান্তর করিয়া দিয়া নিঃস্বত্ববান হন। অতঃপর আব্দুল জলিল উক্ত ৭২০৬ নং সাফ কবলা দলিল মূলে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় বিগত ইংরেজী ২৫/১১/১৯৭৮ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ৭৫১০ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা – ৭৫ শতাংশ জমি মো: আব্দুল গফুর মিয়া এর বরাবরে হস্তান্তর করিয়া দিয়া নিঃস্বত্ববান হন। অতঃপর রূপবান নেছা উক্ত ৭২০৭ নং সাফ কবলা দলিল মূলে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় বিগত ইংরেজী ১৯/০১/১৯৭৯ তারিখে কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত- ৫১৭ নং সাফ কবলা দলিল দ্বারা – ৭৫ শতাংশ জমি মো: আব্দুল গফুর মিয়া এর বরাবরে হস্তান্তর করিয়া দিয়া নিঃস্বত্ববান হন। অতঃপর মো: আব্দুল গফুর মিয়া উক্ত ৩৮৬৮ নং, ৭৫১০ নং ও ৫১৭ নং সাফ কবলা দলিল মূলে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকিয়া বিগত ইংরেজী ১৮/১০/১৯৮৪ তারিখে ১০৫০/৮৪-৮৫ নং নামজারী ও জমাভাগ নথিমূলে ১৬৬৪ নং জোত খুলিয়া বার্ষিক খাজনাদি পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে মো: আব্দুল গফুর মিয়া উল্লেখিতভাবে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করিলে তাহার ত্যাজ্য বিত্ত সম্পত্তিতে তাহার পুত্রগণ মোতালেব মিয়া, মো: আবু তালেব মিয়া ও মো: সিরাজ মিয়া ওরফে সিরাজ উদ্দিন এবং কন্যাদ্বয় মনোয়ারা বেগম ও আনোয়ারা বেগম পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে মালিক নিয়ত হন। অতঃপর মোতালেব মিয়া পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করিলে তাহার ত্যাজ্য বিত্ত সম্পত্তিতে তাহার পুত্রদ্বয় ও কন্যাদ্বয় মো: ইব্রাহিম মিয়া সিকদার, মো: আমজাদ হোসেন সিকদার, লাইলী বেগম ও লিলি আক্তার (আমরা ১ নং হইতে ৪ নং দাতা ও দাত্রীগণ) পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে এবং স্ত্রী জহুরা খাতুন (আমি ৫ নং দাত্রী) স্বামীর স্বত্বে মালিক নিয়ত হই। অতঃপর আমরা অত্র দলিলের দাতা ও দাত্রীগণ উল্লেখিতভাবে মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকিয়া বিগত ইংরেজী ২২/০৫/২০১৯ তারিখে ৩৪৫/১৯-২০ নং নামজারী ও জমাভাগ নথিমূলে – ১২২৩৯ নং জোত খুলিয়া রীতিমত বার্ষিক খাজনাদি পরিশোধ করিয়া এ যাবৎ কাল শান্তিপূর্ণভাবে পরমসুখে ভোগদখল করিয়া আসিতেছি। “ প্রকৃতপক্ষে, অভিযুক্ত দলিলে উল্লিখিত ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ কাল্পনিক ও মনগড়া। যেহেতু সরকারি রেকর্ডে এসএ ও আরএস রেকর্ড থেকে জমিটি ‘খাস’ হিসেবে উল্লেখ আছে।

শটকাটে কাজ সারতে দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া তার আপন ছোট ভাই মো. হারুন অর রশিদকে অভিযুক্ত দলিলে স্বাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন।

এছাড়া, অভিযুক্ত দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থক হিসেবে দেওয়া নামজারি ও জমাভাগের সহকারী কমিশনার (ভূমি), টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল, গাজীপুরের ৩৪৫/২০১৯-২০২০ নম্বর নথিটি অন্য জমির ও অন্য মালিকের; সুতরাং তা জাল। একই সঙ্গে, অভিযুক্ত দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থক হিসেবে দেওয়া ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের রশিদটিও জাল।

কাশিমপুর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত থাকায় কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটির ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা নেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থক হিসেবে দেওয়া ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের রশিদটিও জাল।

এছাড়াও, অভিযুক্ত দলিলে একটি জোত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে কাশিমপুর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গোবিন্দবাড়ি মৌজার ওই নম্বরের জোতে অন্য ব্যক্তির নাম রয়েছে; উল্লিখিত বিক্রেতাদের নাম সেখানে নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, অভিযুক্ত দলিল লেখক মো. হালিম বলেন, “আমি দলিল লিখে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে উপস্থাপন করি। সাব-রেজিস্ট্রার উপযুক্ত মনে করলে রেজিস্ট্রি করে দেয়।”

দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুর জেলার বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রাররা যোগসাজশ করে নিজেরা অবৈধভাবে লাভবান হয়ে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করে আসছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য বেড়িয়ে আসছে। যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জাল কাগজপত্র দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদন চক্রের অন্যতম হোতা গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির বিতর্কিত সদস্য মো. হালিম ভূঁইয়া আরও কয়েকজন দলিল লেখক মিলে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলিল সম্পাদন করে থাকেন।

গাজীপুর নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখকদের নেতা ও তাদের দালালরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে অদৃশ্য ক্ষমতা আর অবৈধ কর্মকাণ্ডের বলয় তৈরি করে রেখেছেন। যাদের কাছে আমরা সাধারণ জনগণ এমনকি ক্ষেত্রমতে সরকারও জিম্মি। তদন্ত করে এদেরকে দ্রুতই দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’

এর আগে, গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে আসা জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের নানামুখী হয়রানি করা এবং ঘুষ নেওয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102