নোয়াখালীতে অন্যান্য পণ্যের মতো মাংসের দামে আগুন নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। কারসাজির মাধ্যমে প্রতি রাতে মুরগির দাম নির্ধারণ করছে তারা। এতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২১০ টাকা। পাশাপাশি এক কেজি গরুর মাংস ৮০০-৯০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহে যারা একবার মাংস কিনতেন, এখন তারা মাসে একবার কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন। আর গরিবের জন্য এই মাংস রীতিমতো মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বাজারে গিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন। আবার অনেকেই দাম শুনে নিরুপায় হয়ে ঘোরাফেরা করছেন। অর্থাৎ তাদের সাধ আছে ঠিকই, কিন্তু কেনার সাধ্য হচ্ছে না। সোমবার নোয়াখালীর চাটখিলে বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, সরকারের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বিক্রয় করার কথা বলা হয়েছে এবং প্রতি নিয়ত বাজার মনিটরিং চলছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জেলা শহরে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ৬৫০/- টাকা মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করা হবে।
যেখানে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য ক্রয়–বিক্রয়ের কথা জানিয়েছে। তার মধ্যে প্রজ্ঞাপনে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচও তুলে ধরা হয়েছে। এর ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। একইভাবে গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম প্রতি কেজি ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ।
কিন্তু চাটখিল ও সোনাইমুড়ী বাজার ঘুরে নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না এই মাংস । অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। এছাড়াও বিক্রেতারা এই মাংস কিনতে গরুর সব স্থানের হাড় ও মাংস মিলিয়ে বিক্রি করছে। তাই ক্রেতাদের লাভের তুলনায় লোকসানই গুনতে হচ্ছে বেশি। খাসির মাংস ১১৫০-১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০-২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৫০-৩৯০ টাকা এবং দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা।
সকাল ১০টায় চাটখিলে গরুর মাংসের দোকানে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহেল হোসেন। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে ছেলেমেয়ে গরুর মাংস খেতে চাচ্ছে। তাই মাংসের দোকানে আসলাম। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০ টাকা। তবে হাড় ছাড়া মাংস ৯০০ টাকা চাইছে। তাই আধা কেজি দিতে বলেছি। তিনি জানান, এক সময় সপ্তাহে একদিন হলেও গরুর মাংস কেনা হতো, এখন মাসে একবারও কিনতে পারি না। এ ছাড়া সব ধরনের মুরগির দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই মাংস কেনা যেন দায় হয়ে পড়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যেভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত যে উৎপাদন ব্যয়, তার চেয়ে বাজারের দাম অনেক বেশি। তাই সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে। কেন এত দাম, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনিয়ম পেলে অসাধুদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ দাম বাড়ায় গরিবের আমিষে টান পড়ছে।
এব্যাপারে নোয়াখালী জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর সহকারি পরিচালক মো. কাউসার মিয়াকে অনেক বার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।