শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মধুপুরে তারুণ্যের উৎসব শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে  বিলাইছড়িতে ত্রৈ-মাসিক ইয়ুথ সভা বসতিতে ‘পানির সততা’ নিশ্চিত করতে ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত লালপুরে গরুর ট্রাক সহ গরু চোর আটক ডুমুরিয়ায় ৩২ দলীয় কেরাম টুর্ণামেন্ট ২০২৫ ‌উপলক্ষে আলোচনা সভা ও উদ্বোধন। প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাচ্চু চন্দ্রগঞ্জ কারামতিয়া কামিল মাদ্রাসায় সবক ও দোয়া অনুষ্ঠিত গন উন্নয়ন ও নাগরিক পরিসেবা দিতে দুয়ারে উস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অ্যাডভোকেট মিকাইল মোল্লা ডুমুরিয়ায় চিংড়িতে জেলি পুশ,করার অপরাধে ১জনকে৩মাসের জেল

যমুনার মতো হারিয়ে গেছে গোপালপুর গোবিন্দ মন্দিরের জৌলুস

রাকিবুল হাসান শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪
  • ৪৮ Time View

যমুনার মতো হারিয়ে গেছে গোপালপুর গোবিন্দ মন্দিরের জৌলুসজৌলুস হারিয়ে গেছে গোপালপুর গোবিন্দ মন্দিরের/
গোপালপুর, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা: আঙুল উঁচিয়ে পীযুষ ক‍ান্তি মণ্ডল বলছিলেন “শুনেছি মন্দিরের কোল ঘেঁষে এক সময় কলকল করে বয়ে যেতো যমুনা। চর পড়লে দখল হয়ে যায় ধীরে ধীরে, গড়ে ওঠে জনবসতি”।
মন্দির থেকে পূব দিকে নেমে যাওয়া কয়েক সিঁড়ি এখনও মিলিয়ে যায়নি। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আঙুল বর‍াবর খুব বেশি দূর চোখ এগুলো না- বাড়িতে আটকে যায়! পূজা উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি আরও আক্ষেপ করলেন, মন্দিরের জায়গা পর্যন্ত চলে গেছে বসত ঘরের নীচে।
এখন গোপালপুর মোড় থেকে মন্দিরে আসার রাস্তা নির্মাণ করার জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
শ্যামনগর থানা সদর থেকে এক মাইল পশ্চিমে গোপালপুরের মন্দিরটি গোবিন্দ দেবের মন্দির নামে পরিচত। যদিও স্থানীয়রা গোপালপুরের পরিচয় দেন ‘চডেরাবিল’।
গোপালপুর মোড় থেকে যে রাস্তা হাতের বাঁয়ে নেমে গেছে তার দশা বেহাল! পায়ে ঠেলা ভ্যানে দশ মিনিটের পথ এসে এখান থেকে ইট ফেলা পায়ে হাঁটা সরু পথ ধরে মন্দিরে পৌঁছাতে সময় লাগে আরও কুড়ি মিনিট। নেই কোনো সাইনবোর্ড, পথ নির্দেশনা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সমাধী পেরিয়ে বাগানের ভেতরে গেলে চোখে পড়বে একটি মাটির ঢিবি। ওপরে অবাধ্য বেড়ে উঠেছে চেনা-অচেনা নানা গাছ। মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ঘাসের দল!
তবে দেখার কেউ নেই বলা যাবে না। জঙ্গল পেরিয়ে মন্দিরের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের একটি সাইনবোর্ড- ‘কোন ব্যক্তি এই পুরাকীর্তির কোন রকম ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে বা এর কোন বিকৃতি বা অংগচ্ছেদ ঘটালে বা এর কোন অংশের উপর কিছু লিখলে বা খোদাই করলে বা কোন চিহ্ন বা দাগ কাটলে, ১৯৬৮ সালের ১৪ নং পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারার অধীনে তিনি সর্বাধিক এক বৎসর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন’।
সেখানে কেবল কালের সাক্ষী ছাড়া কিছুই নেই। পাশে নতুন করে গড়ে তোলা একচালা ঘরে এখন পূজো হয়।
ইতিহাস বলে, ১৫৯১ সালে উড়িষ্যার পাঠানরা যখন মোঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তখন তারা জগন্নাথের মন্দির দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে কটক ও জলেশ্বরের দিকে এগুতে থাকে। শেষে বিষ্ণুপুরের ভূঁঞা হাম্বীর মল্লের রাজ্য আক্রমণ করে। মোঘলরা তাদের প্রতিহত করতে সামন্ত রাজাদের আদেশ দিলে প্রতাপাদিত্য উড়িষ্যা অভিযান শুরু করেন। ১৫৯৩ সালে প্রতাপাদিত্য উড়িষ্যা অভিযান শেষ করে তার রাজধানী যশোরে ফিরে আসেন। ওই সময় তিনি দু’টি অপূর্ব মূর্তি সঙ্গে আনেন। একজন সেবাইতকেও আনেন। বিগ্রহ দু’টি দেখে তার পিতা বসন্ত রায় খুবই আনন্দিত হন এবং মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। অল্পদিন সে মন্দির নির্মাণ করা হয়। বিগ্রহের সঙ্গে উড়িষ্যার যে ব্রাহ্মণ এসেছিলেন তার নাম বল্লভাচার্য। মন্দির তৈরির পরে তাকেই সেবাইত নিযুক্ত করেন প্রতাপাদিত্য।
মন্দিরে প্রবেশের জন্য বাইরের দেয়ালের প্রতিটি পাশে দু’টি করে মোট আটটি দরজা ছিলো আর মূল মন্দিরের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে ঠিক মাঝখানে তিনটি দরজা ছিলো। কেবল উত্তর পাশে কোনো দরজা ছিলো না। উত্তর দিকে বিগ্রহ বসানো জায়গা ছিলো- তা এখনও পরিষ্কার বোঝা যায়।
অবয়ব দেখে মন্দিরটি এক তলা মনে হলেও এটি দোতলা ছিলো- এমন মত দিয়েছেন ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র।
ধারণা করা হয়, প্রতাপাদিত্যের আনা বিগ্রহ দু’টি প্রথমে রায়পুরে- সেখান থেকে কাঠুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর একটি হলো শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি, অন্যটি রাধারাণীর মূর্তি। যদিও এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।সেবাইত বল্লভাচার্য যেনো স্থায়ীভাবে এ দেশে বসবাস করতে পারেন সেজন্য প্রতাপাদিত্য তাকে অধিকারী উপাধি দেন। শুধু তাই নয়, রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ কন্যার সঙ্গে বল্লভাচার্যের সঙ্গে বিয়েও দেন। তার বংশ ধরেরা এখনও অধিকারী হিসেবে পরিচিত।
গোবিন্দ দেবের মন্দিরের পশ্চিম দিকে ছিলো প্রশস্ত দোলমঞ্চ। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমায় ওখানে মেলা বসতো। সেই ভিত নেই, এখন রয়েছে মাটির উঁচু বেদী। সেখানে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি খেজুর গাছ। জানান দিচ্ছে কোলাহলে মুখর এক সময়ের ‘গোবিন্দ দেবের মন্দির’ আজ কত একা!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102