রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
জলবায়ু সহনশীল বাগদা চিংড়ির টেকসই উৎপাদনে সিনবায়োটিক প্রযুক্তির ব্যবহার: গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঢাকঢোল বাজিয়ে জমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সুবর্ণচর উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক খলিল সদস্য সচিব আরিফ সবুজ বাঁকুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ সুপার হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশের উপ-পরিচালক প্রশাসনের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না- মামুনুর রশীদ মামুন ধনবাড়ি সিমান্তবর্তী এলাকায় ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে ৬জন নিহত মধুপুরে সিঁধ কেটে চুরি জনমনে আতঙ্ক পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ২৪ ঘন্টায় ১০০ পিচ ইয়াবা, ১কেজি গাঁজা,১০ গ্রাম হেরোইন ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল সহ ৬ জন গ্রেফতার। চন্দ্রগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত

জলবায়ু সহনশীল বাগদা চিংড়ির টেকসই উৎপাদনে সিনবায়োটিক প্রযুক্তির ব্যবহার: গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া, খুলনাঃ
  • Update Time : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩০ Time View

বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের জি আই পণ্য। এটি দেশে সাদা সোনা নামে খ্যাত। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৯১০০০ হেক্টর জমিতে ১৩৭০০০ মে.টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই উৎপাদন দ্বিগুন বা আরো বেশী বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ অঞ্চলের আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, লবনাক্ততা ও জীববৈচিত্র্য পরিবর্তিত ভীষণভাবে হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, লবণাক্ততা বৃ্দ্ধি ইত্যাদি কারণে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ঝুকিঁ সৃষ্টি হচ্ছে। পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুনাগুনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে যা চিংড়িসহ অন্যান্য জলজজীবের জীবন চক্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে চিংড়ি স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যবহত হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, নতুন নতুন রোগের সংক্রমণ ঘটছে যা অনেক সময় মড়ক আকারে দেখা দিচ্ছে।  চাষির উৎপাদন খরচ বাড়ছে কিন্তু কাংখিত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

সিনবায়োটিক প্রযুক্তিটি হলো বিশেষ উপায়ে তৈরী প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিকের সংমিশ্রণ যা খাদ্যের সাথে চিংড়িকে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি চিংড়ি খামারের পানিতেও প্রয়োগ করা হয়। চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ফলপ্রসু ও কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ব্যবহারের ফলে চিংড়ি চাষের পরিবেশ উন্নত হয়, ক্ষতিকর রোগ জীবাণূ মারা যায়, পানির গুনগত মান বজায় থাকে, চিংড়ির অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় ফলে চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, উৎপাদনও বাড়ে। খাদ্যের এফসিআর কম হয় ফলে উৎপাদন খরচ কমে। ভারত, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া ও মালয়শিয়ায় এই প্রযুক্তি  ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হলেও আমাদের দেশে এখনও এটির ব্যবহার শুরু হয়নি।

 

মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ(এসসিএমএফ) প্রকল্পের গ্রান্ট উইন্ডো-১ এর আর্থিক সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড.সৈয়দ হাফিজুর রহমান “বাংলাদেশর উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার করে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধের জন্য সিনবায়োটিক প্রযুক্তির ব্যবহার” বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সহ-গবেষক ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আছাদুজ্জামান মানিক। খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় সেমি ইনটেনসিভ ও ক্লাস্টার পদ্ধতির ১৮টি পুকুরে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণা কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে টেকসই চিংড়ি চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন। গবেষণায় আবহাওয়ার তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেট বেজড ওয়েদার ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। পানির গুনাগুন জানার জন্য ইন্টারনেট বেজড ডাটা লগার ব্যবহার করা হয়েছে।  গবেষণার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়েছে। গবেষণা সংশ্লিষ্ট চাষি কৌশিক বাগচী, সুজিত মন্ডল ও শুভেন্দু বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিনবায়োটিক ব্যবহার করা পুকরে উৎপাদন গত বছরের চেয়ে ২৫-৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন রোগের সংক্রমণ ঘটেনি। চিংড়িগুলো খুব চকচকে ও স্বাস্থ্যকর। ওজনও বেশী হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের মিনারেলস এবং খাবার খরচ ২০% কম হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ২৫-৩০% লাভ বেশী হয়েছে বলে সে জানিয়েছেন। কৌশিকের সাথে আশে পাশের চাষিরা বাগদা চিংড়ি চাষে নিয়মিত সিনবায়োটিক ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  

এসসিএমএফ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রী বলেন, “চিংড়ি চাষে সিনবায়োটিক ব্যবহার বিষয়ক গবেষণাটি বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং চাষিদের মনে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এটি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে চিংড়ি সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটনো যেতে পারে”।

চিংড়ি উৎপাদনের ব্যপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা এর উৎপাদন ও চাষকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। আশা করা যায় গবেষণায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি এসকল সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে এবং দেশের চিংড়ি সেক্টরে নতুন আশার সঞ্চার ঘটাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102