শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না- মামুনুর রশীদ মামুন ধনবাড়ি সিমান্তবর্তী এলাকায় ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে ৬জন নিহত মধুপুরে সিঁধ কেটে চুরি জনমনে আতঙ্ক পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ২৪ ঘন্টায় ১০০ পিচ ইয়াবা, ১কেজি গাঁজা,১০ গ্রাম হেরোইন ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল সহ ৬ জন গ্রেফতার। চন্দ্রগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠিত শুরু হয়েছে সেফ ড্রাইভ,সেফ লাইফ কর্মসূচি ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের অধীনে উস্তি থানার পক্ষ থেকে ডুমুরিয়ায় খাল পুনঃখনন কর্মসূচির উদ্বোধন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ জয় কর্মকার কে শুভেচ্ছা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন মধুপুরে মাটি কাঁটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত বিলাইছড়িতে কুতুব দিয়া সরকারি প্রা: বিদ্যালয় কর্তৃক বনভোজন ও শিশু বরণ অনুষ্ঠিত 

সিলেট চা বাগান গুলোতে দৈন্যদশা ৩৭ দিন ধরে শ্রমিকদের কর্ম বিরতি

সিলেট প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

৩৭ দিন ধরে চা শ্রমিকদের কর্ম বিরতির পর দৈন্যদশায় পড়তে হচ্ছে মালিকপক্ষের। পেটে না ভাত না দিয়ে বেকার শ্রমিক পরিবার গুলোতে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। নতুন কুঁড়ি, কচি পাতা বুড়িয়ে যাচ্ছে গাছেই। চায়ের উৎপাদনে ধস নেমেছে। তীব্র অর্থ সংকটে বর্তমানে বিপর্যস্ত সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকানাধীন থাকা এক সময়ের লাভ জনক ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি চা বাগান।
চলমান পরিস্থিতিতে চায়ের উৎপাদন বন্ধ থাকায় আগামীতে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের।
এদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে বাগানের চলমান সমস্যা সমাধানে সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল। তিনি জানান, সাত দিনের মধ্যে সংকট দূরীকরণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বাগান গুলো সে ক্ষেত্রে এত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৪টি সহ এনটিসির এ ১২টি বাগানে চায়ের উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের চা শিল্পে। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিদ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সংকট প্রবল হবে।
উপজেলার লস্করপুর ভ্যালির ৪টি চা বাগানে ৩৭ দিন ধরে চলছে কর্ম বিরতি। ১০ সপ্তাহ ধরে এসব বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের রেশন, মজুরিসহ কর্মরত অন্যদেরও বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এনটিসি চেয়ারম্যান ও ৭ পরিচালক একযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এতে করে আটকে যায় ব্যাংক ঋণ। চরম অর্থসংকটে পড়ে বাগান গুলো। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের মজুরি, ভাতা ও রেশন।
এনটিসির একটি সূত্র জানায়, সংস্থাটির চেয়ারম্যান শেখ কবির আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন পর্ষদের ৭ পরিচালক। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে তীব্র সংকট দেখা দেয়। এতে লস্করপুর ভ্যালির মূল ৪টি বাগানসহ ৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মরতদের বেতন-ভাতা আটকে যায়। একই পরিস্থিতির সংস্থার অধীনে থাকা অন্য বাগান গুলোতেও। ভ্যালির চন্ডিছড়া, বেলাবিল, পারকুল, নাসিমাবাদ, তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর ও সাতছড়ি চা বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ হয় ২২ আগস্ট থেকে। পরে শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কোনো সমাধান না পেয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে কর্ম বিরতিতে যান শ্রমিকরা। এরপরেই থমকে যায় বাগানের উৎপাদন।
এদিকে নষ্ট হতে শুরু করেছে বাগানে মজুত থাকা ১০ লাখ কেজি তৈরি চা পাতা। প্রতিটি বাগানে দৈনিক ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি নতুন কুঁড়ি ও কাঁচা পাতা উত্তোলন করা হয়। শ্রমিক না থাকায় কুঁড়ি ও কচি পাতা নষ্ট হচ্ছে গাছেই। যার কারণে চলমান সংকটের পাশাপাশি উৎপাদনে ধসের কারণে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এনটিসি কর্তৃপক্ষ জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে বাগান গুলো। উপজেলার ৪টি বাগানের কার্যক্রম ৩৭ দিন ধরে বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।
চন্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক বিধবা রেনু খা বাউরি জানান, বাগানে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের পরিবার সামাল দেন। ১০ সপ্তাহের মজুরি ও রেশন বকেয়া। এদিকে ৩৭ দিন ধরে কাজ বন্ধ। কোনো ভাবেই আর সংসার সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
একই অবস্থা চা শ্রমিক রিতা গঞ্জুর পরিবারের। পরিবারের আহারে টান পড়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে অসুস্থ মায়ের। অভাব-অনটনে পড়ে দিশেহারা তিনি।
দুলন রিকি হাসনের পরিবারেও স্ত্রীসহ রয়েছে ৩ সন্তান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
স্থানীয় চা শ্রমিকদের দাবি, বাগান কর্তৃপক্ষ যদি তাদের পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দিতেন, কোনো ভাবে তাহলে বাগানে চায়ের উৎপাদন সচল থাকত। এতে করে চলমান অর্থ সংকট সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে পারতেন কর্তৃপক্ষ।
চন্ডিছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার জানান, বারবার আশ্বাস দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। বকেয়া পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েছে কর্ম বিরতিতে যেতে। এখন এসব বাগানে চায়ের উৎপাদন থমকে গেছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দায়িত্বপালনে ব্যর্থতার কারণেই এমনটা হয়েছে।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই মুক্তি মিলবে এ অবস্থা থেকে। গত বছরও রেকর্ড গড়ে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে ছিল বাগান গুলো। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। তবে উৎপাদনে ভাটা পড়ায় সেই লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102