আইন-আদালত

চট্টগ্রামে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা: সংবাদ মাধ্যমকে হুমকি, সাংবাদিক আটক

  মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ২১ আগস্ট ২০২৫ , ১০:১৯:২৫

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের পুলিশের হুমকি ও হয়রানির ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সাংবাদিক মহলে। সম্প্রতি একটি জাতীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনের পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ সংবাদ মাধ্যমকে কঠোর আইনগত ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছেন। একই দিনে মাঠে দায়িত্ব পালনকালে দুই সাংবাদিককে হেনস্তা ও একজনকে আটক করার অভিযোগ উঠেছে ডবলমুরিং থানার ওসির বিরুদ্ধে।ব্যাটারিচালিত রিকশা টোকেন বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন ১৯ আগস্ট চ্যানেল ২৪–এর সিনিয়র রিপোর্টার এমদাদুল হক চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার টোকেন বাণিজ্য নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা অবৈধভাবে রিকশা আটক করে অর্থের বিনিময়ে আবার ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার পরিবর্তে ওই অর্থ চলে যাচ্ছে কর্মকর্তাদের পকেটে।
এই প্রতিবেদনের পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটিকে “মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত” বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পুলিশের কার্যালয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের অনুমতি নিতে হবে। ভবিষ্যতে এমন সংবাদ প্রচার করা হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।কমিশনারের ভাষায় ক্ষোভ সাংবাদিকদের
,প্রতিবেদনকারী এমদাদুল হক বলেন, সংবাদের সবকিছুই সত্য। প্রমাণ আমার কাছে আছে। পুলিশ অবৈধ রিকশা ধরে টাকা নিচ্ছে, আবার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কোনো রসিদ দেয়া হচ্ছে না। অথচ কমিশনার ব্যবস্থা নেয়ার বদলে আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন।” চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, একজন পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না। ৫ আগস্টের পর আমরা এ ধরনের আচরণ আশা করি না। কমিশনার নিশ্চয় তার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন।সাংবাদিক আটক নিয়ে বিতর্ক,এদিকে বুধবার ডবলমুরিং থানার সামনে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল কাইয়ুম ও যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক মো. মাসুম হয়রানির শিকার হন। অভিযোগ উঠেছে, সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন থানার ওসি বাবুল আজাদ। এমনকি মো. মাসুমকে ২০ মিনিট লকআপে আটকে রাখা হয়।মো. মাসুম বলেন, পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে আমি সেটি লাইভ করছিলাম। তখন ওসি আমাকে গালাগালি করেন। এরপর তিনি আমাকে থানায় আটকে রাখেন।”
পুলিশের ব্যাখ্যা,ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের মুখপাত্র মাহমুদা বেগম বলেন, ডবলমুরিংয়ের ঘটনায় ডিসি উপস্থিত থেকে বিষয়টি সমাধান করেছেন। ডিসি ও ওসি বিস্তারিত বলতে পারবেন।” তবে কমিশনারের দেয়া হুমকি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। সাংবাদিক মহল বলছে, পুলিশের এই আচরণ সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। তারা মনে করেন, সংবাদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে কমিশনারের ভিন্ন পথ ছিল। কিন্তু হুমকি দিয়ে বিবৃতি দেয়া ও মাঠে সংবাদকর্মীদের আটক করা গণমাধ্যমের জন্য উদ্বেগজনক বার্তা।

আরও খবর