দেশজুড়ে

ডাকবাংলা-বড়বাজার সড়ক ও ফুটপাত দখলে, মানুষের চলাচলই দায়

  কাজী আতিক, খুলনা প্রতিনিধিঃ ২১ অক্টোবর ২০২৫ , ৫:৪৬:২১

খুলনার ব্যস্ততম এলাকা ডাকবাংলা মোড়ে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। পথচারী ও যানবাহন চালকদের ভোগান্তির মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ফুটপাত ও সড়কের বড় অংশজুড়ে হকারদের অবৈধ দখল। ফলে পূজোর ভিড় ও গরমে মানুষের চলাচল হয়ে উঠছে আরও দুর্বিষহ।

বড়বাজারের পথচারী হাসানুজ্জামান বলেন, ‘দেখুন, এই মার্কেটের সবকিছু এক জায়গায় থাকায় এখানে মানুষের চলাচল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। পূজোয় ভিড় তো আছেই, তার উপর গরমে যাতায়াত করা দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এখানে যে যানজট হয়, তাতে চলাচল করা সত্যিই খুব অশান্তির। ফুটপাত দখলে তো আছেই, সঙ্গে রাস্তাও অনেকটা দখল হয়ে গেছে। একমাত্র সরকারের সচেতন ও সাবক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই এর থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আমি দেখতে পাচ্ছি।’

সড়কে দাড়ানো বিক্রেতারা বলেন, আমরা হকার রাস্তায় গাড়ি ঠেলে ব্যবসা করি। এখন এখানে আছি; এখান থেকে সরিয়ে দিলে অন্য জায়গায় বসবো। আপনারা জানেন, আমিও জানি এইভাবে ব্যবসা করা অবৈধ। সেটা মেনে বসে থাকলে তো আমাদের চলবে না। লেখাপড়া যেটুকু জানি, তাতে বাইরে কাজ করতে গেলে যে প্রশ্নগুলো করে সেগুলোর উত্তর জানা নেই। আর রিকশাও চালাতে পারি না। পেটের দায়ে সংসার চালাতে গাড়ি নিয়ে মাল বিক্রি করি।

রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তায় সন্ধ্যার পর থেকে আর যাওয়া যায় না। রিকশা নিয়ে যেতে পারি না, মাঝে মধ্যে যাত্রীদের গায়েও ধাক্কা লাগে। পুলিশ একবার তাড়ায়, তারা একটু পরে আবার আসে। এভাবে চলতেই থাকে। আমরা চাই খুলনা শহর যানজটমুক্ত হোক। সবাই যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এখানে ২০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। আমার দোকানের সামনে ব্যবসা করার মূল কারণ হলো আমি যদি জায়গাটা খালি রাখি, তাহলে সেখানে মোটরসাইকেল রেখে দোকানে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তাদের গাড়ি সরাতে বললে অযথা বাকবিতণ্ডায় জড়াতে হয়। এ কারণেই আমি বাইরেও ব্যবসা করি। যখন উচ্ছেদ অভিযান হয়, সরিয়ে নিতে বললে সাথে সাথে সরিয়ে নেই। সেদিন আর দোকান বসাই না, তবে পরের দিন আবার দোকান বসাই। এক কথায়, আমার মনে হয় এখানে মোটরসাইকেল পার্কিং ঠিক হলে আমাদের দোকানের সামনে তারা আর আসবে না। তখন ক্রেতারা সহজে দোকানে আসতে পারবে আর আমাদেরও বাইরে দোকান বসাতে হবে না।’

সুজন-খুলনা জেলা কমিটির সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খোদা খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘শহরের সর্বত্র একই চিত্র। দখলদারদের কারণে মানুষের চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। এর পেছনে কতিপয় সুবিধাভোগীরাও রয়েছে। এখানে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা বেশি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক নেতাদের আশ^স্ত করতে হবে যে তারা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন খুলনা গেজেটকে বলেন, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে থাকা দোকান উচ্ছেদ করার পর ফের তারা বসাচ্ছে। গেল কয়েকদিন খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু এলাকায় মানুষের চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর ৫ শতাংশ স্থানে এখনও অবৈধভাবে দখল করে আছে। নগরীর নগরীর ময়লাপোতা, ডাকবাংলা, ফেরিঘাট, প্রেসক্লাব রোড, শিববাড়ি মোড়ের কিছু অংশ, পাওয়ার হাউজ মোড়, টোলের মোড়, জাতিসংঘ পার্কের পেছনের অংশে সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ দখল করে ব্যবসা করছে।

তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশকে সম্মিলিতভাবে নামতে হবে। অবৈধ দখলদাররা যে কয়বার নামবে আমরাও সম্মিলিতভাবে লাগাতার অভিযান করবো। তাহলে মানুষের চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টি এবং যানজটমুক্ত করা সম্ভব হবে।

আরও খবর