চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি মামলার বাদি এক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষককে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে সেই কৃষককে সারারাত আটকে রেখে পরদিন সন্ধ্যায় ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষক ও তার পরিবারের। এনিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে রাজশাহীর উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্র হিন্দুপাড়া গ্রামের নুরু পাহানের ছেলে শ্রী মন্টু পাহান। গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি এই অভিযোগ দেন। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাচোল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কোন ধরনের মামলা বা অভিযোগ না থাকলেও আসামীদের পক্ষ নিয়ে বাদি মন্টু পাহানকে থানায় তুলে নিয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর। পরবর্তীতে থানায় নিয়ে গিয়ে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেন এসআই আলমগীর। এমনকি ১ লাখ ২০ টাকা না দিলে বিস্ফোরক মামলায় কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেয় হয়। পরে মন্টু পাহানের পরিবার ধারদেনা করে ৬০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে এসআই আলমগীরকে দিলে পরদিন সন্ধ্যায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক মন্ট পাহান বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আমার একটি পুকুরে তিনবার বিষ মেরে মাছ মারা হয়েছে। আগের দুবার থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পায়নি। এবার গত ১৩ নভেম্বর পুনরায় আমার পুকুরে বিষ মেরে সব মাছ মারা হয়। মাছ মেরে ফেলার পর পর চুন দিতে দেখলে এনিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। এরপর আগের দিন হঠাৎ ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলেন এসআই আলমগীর। এর পরদিন রাতে হঠাৎ করে আমার বাড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৬০ হাজার টাকা দেয়ার পর ছেড়ে দেয়।
মন্টু পাহানের ছেলে শুভঙ্কর পাহান বলেন, গভীর রাতে এসে বাবাকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে যায় এসআই আলমগীর। এরপর থানায় নিয়ে গিয়ে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার চাপ দেয়। পরবর্তীতে অনেক রিকোয়েস্ট করে ৬০ হাজার টাকা ধার দেয়ার ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ আমার বাবার নামে কোন মামলা ছিল না। আমার বাবার অপরাধ, আমাদের পুকুরে বিষ দেয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছিল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।
এদিকে, থানায় নিয়ে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন নাচোল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর। তিনি বলেন, মন্ট পাহানের বিরুদ্ধে ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দিয়েছিল। এর ভিক্তিতে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আদিবাসী নেতাদের মাধ্যমে কথা বলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। টাকা নেয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিক্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, অভিযোগটি পাওয়া গেছে। এর তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।