বর্তমান সময়ে অনেক বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পকে উন্নয়ন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, কিন্তু এই উন্নয়নের পিছনে রয়েছে বিশাল ঋণের বোঝা, যা দেশের জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঋণ শোধ করবে কে? সাধারণ জনগণই এর মূল দায়ভার বহন করবে।
আসুন দেখি কিছু প্রকল্পের পেছনের সত্য..
১। মেট্রোরেল প্রকল্প..
ঋণের উৎস..
মেট্রোরেল প্রকল্পটি নির্মাণ করতে জাপান থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন দেখানো হলেও, এই ঋণের বোঝা দেশের জনগণের উপর পড়েছে।
২। পদ্মা সেতু..
ঋণের উৎস..
চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও এটি দেশের জন্য একটি বড় অবকাঠামো, কিন্তু এর পেছনের ঋণের বোঝা কাদের উপর বর্তাবে?
৩। মডেল মসজিদ..
আনুদান..
সৌদি আরব থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার অনুদানে এই মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। অথচ এই অনুদানকে নিজের কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে সত্যের অপলাপ।
৪। কর্ণফুলী টানেল..
ঋণের উৎস..
চীনের ঋণ সহায়তায় কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে, এই প্রকল্পের ঋণও দেশের সাধারণ মানুষকে পরিশোধ করতে হবে।
সারমর্ম..
এসব প্রকল্পের পেছনে থাকা ঋণের বোঝা দেশের জনগণকেই শোধ করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ এর দায়ভার নেবে না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট…
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট চলছে। এর পেছনের কারণগুলো হলো দুর্নীতি, অদক্ষতা, এবং বিদেশি কোম্পানির সাথে অনৈতিক চুক্তি। দেশের সাধারণ মানুষকে এর মূল্য দিতে হচ্ছে, অথচ সংকটের মূল কারণগুলোর সমাধান নেই।
১। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ চুক্তি..
চুক্তির অস্বচ্ছতা..
ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে করা বিদ্যুৎ চুক্তি অনুযায়ী ৮০ কোটি ডলার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তারা প্রতিশ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ৭ টাকার বিদ্যুৎ ১৪ টাকায় কেনা হলো? এর পেছনের কারণ কি সাধারণ জনগণ জানে?
২। তেল সরবরাহকারী কোম্পানির অদক্ষতা..
তেলের অভাব..
তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তাদের পাওনা ৫০ কোটি ডলার দাবি করছে, যার ফলে তারা তেল সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে দেশে জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেও প্রভাবিত করছে।
৩। গ্যাস সংকট ও ডলার লুট..
গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যর্থতা..
দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এবং সামিটের মাধ্যমে ডলার লুটের কারণে দেশে ডলার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ..
গ্যাসের অভাবে গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
৪। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি..
পিডিবির বকেয়া..
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পিডিবির কাছে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে, যা তারা তাদের পাওনাদারদের পরিশোধ করতে পারছে না। অথচ গ্রাহকরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছে, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল?
লোডশেডিং ও জনগণের ভোগান্তি..
২০২৪ সালে এসে দেশজুড়ে ব্যাপক লোডশেডিং দেখা যাচ্ছে। অথচ গত কয়েক বছর ধরে জনগণ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এসেছে। যারা এখন লোডশেডিংয়ের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন—বিগত ১০ বছর ধরে যে বিদ্যুৎ বিল দিয়েছেন, তার প্রতিফল কোথায়?
প্রশ্ন হচ্ছে..
বিলের সঠিক ব্যবহার..
যদি জনগণ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকে, তবে সেই অর্থ কোথায় খরচ হয়েছে? এই অর্থ কি সত্যিই দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো খাতে অপব্যবহার করা হয়েছে?
লোডশেডিংয়ের কারণ..
কেন এত লোডশেডিং হচ্ছে? এর মূল কারণ কী? এসব প্রশ্নের জবাব কি সাধারণ জনগণের জানা উচিত নয়?
এসব প্রশ্নের জবাব কারা দেবে?
সাধারণ জনগণকে আজ এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাদের কি এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কোনো দায় নেই? দেশের মানুষকে ঋণের বোঝা ও লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে হলে, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।
©️