বিশেষ প্রতিনিধিঃ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২:২৩:৩১
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের খাটরা গ্রামে প্রয়োজনহীন কালভার্ট নির্মাণ, নিম্নমানের রাস্তা সংস্কার ও জিএসআইডিপি প্রকল্পের অর্থের অপচয়,অনিয়ম,দূর্নীতি সহ জমি জবর দখল নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। গ্রামের উন্নয়নের নামে সরকারি তহবিলের অব্যবস্থাপনায় যেন অগ্রগতি নয়, বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এলজিইডি কর্মকর্তা সফিউর রহমান বাচ্চু মুন্সির প্রভাবেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। জিএসআইডিপি প্রকল্পের কাউলিবেড়া ইউনিয়নের অধীনে SDW-199 নং দরপত্রের আওতায় খাটরার পশ্চিম পাড়া এলাকার একটি নাল জমিকে কবরস্থান হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে বাচ্চুর কোথাও কোন কাজ,মাটি ভরাট বা প্রাচীর নির্মাণে কারো অনুমতি প্রয়োজন হয় নাই।স্থানীয়রা জানায়, প্রকল্পের অর্থ দিয়ে বাচ্চু তার নিজের শ্বশুর বাড়ি এলাকায়ও কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ করে দিয়েছেন,তবে এবিষয়ে আমাদের আরও তথ্য উপাত্ত যাচাই এর প্রয়োজন আছে।
ফয়সাল রাজু নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, “এই বাচ্চু ও তার সহযোগীরা সহ জিএসআইডিপি প্রকল্পের কাউলিবেড়া ইউনিয়নের অধীনে SDW-199 নং দরপত্রের আওতায় অর্থ ব্যবহার করে আমাদের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ৮.৮ শতক জমিতে মাটি ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণ করেছেন।এই জমির রেকর্ড আছে আমাদের নামে এবং খাজনাও আমরা পরিশোধ করি।তিনি আরও বলেন, “সরকারি কর্মকর্তারা প্রজেক্ট এর নামে অনুমতি ছাড়া যে কোন সময় যে কারো যে কোনো জমি দখল করে নিতে পারেন না, এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।ফয়সাল রাজু আরও বলেন,শাহ আলম চৌধুরীর ওয়ারিশ হিসেবে আমরা কাউকে উক্ত ৮.৮ শতক জমিতে মাটি ভরাট বা প্রাচীর নির্মাণের লিখিত অনুমতি দেই নাই। আর আমাদের পক্ষে অন্য কেউ এখানে অনুমতি দিতেও পারে না।আমাদের অংশের জমিতে কি আছে বা ছিল সেটা দেখার বাচ্চু বা সেলিমগং এর কাজ না।আমাদের অংশের জমিতে কি করবো অথবা কি করতে হবে তার সিদ্ধান্ত একান্তই আমরা পারিবারিক ভাবে নিবো।এটা আমাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি।সরকারি কর্মচারী হিসেবে বাচ্চু গংরা সংঘবদ্ধভাবে তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেছেন যা সরকারি আইনের সম্পূর্ণ লংঘন ।তাদের হেডম আছে, তাই তারা তাদের হেডমের সর্বোচ্চ ব্যবহার দেখাচ্ছে ও দেখিয়েছে।আমরা শাহ আলম চৌধুরী ওয়ারিশ ।আমাদের পরিবারে আমরা অত্যন্ত নিরীহ , শান্তি প্রিয় মানুষ,আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল এবং আস্হা আছে,ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।খাটরার গ্রামেবাসী জানেন, গত শত বছরে আমাদের পরিবার নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে শান্তি পূর্ণ বসবাস করে আসছি।সকলের আরও মনে রাখতে হবে দানবীর হতে অর্থ আর হৃদয় দুটোই প্রয়োজন।শীঘ্রই আমরা পারিবারিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্বাহী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাবো।
অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমদ মিয়াকে উথাপিত বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আহ্বান জানানো হলেও তিনি কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি জানান, গ্রামের কোর কমিটির প্রধান সফিউর রহমান বাচ্চুর নির্দেশ ছাড়া তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।আহমদ মিয়া জানিয়েছেন বাচ্চু তাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কোন মূল্যে জমির দখল ধরে রাখতে।এই আহমদ মিয়াদের একই অঙের অনেক রুপ আমাদের কাছে প্রকাশ পায়েছে,।যার জবাব হয়ত একদিন তাদেরও দিতে হতে পারে।বাচ্চু গং এর বিরুদ্ধে আনীত মসজিদ কমিটির নামে জমি দখলে রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি একটি গুরুতর অপরাধ এবং সংঘবদ্ধ চক্রের কর্মকাণ্ড হিসেবে ধরা যেতে পারে । আর এই কারনেই আমাদের সন্দেহ প্রতিনিয়ত আরও ঘনিভূত হচ্ছে।গ্রামে আলোচনা আছে রাত গভীরে ওমর – মাসুদ মিয়াদের ঐ স্হানের আশের পাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায় ?
ফয়সাল রাজু আরও জানান,এখন এই জমি আমরা বুঝে নিতে চাওয়াও অনেক অনেক ঝুঁকি পূর্ণ ।কি হচ্ছে ঐ জমিতে ? কেনইবা বাচ্চু – সেলিম গংরা মসজিদ কমিটির মাধ্যমে দখল নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন।তবে কি আমরা ধরে নিবো গ্রামবাসীর জন্য এই চক্র একটা ম্যাসেজ দেওয়ার চেষ্টা করছেন?এটা কি তারা সংঘবদ্ধ পেশির শক্তির জানান দিচ্ছেন ?
মসজিদ কমিটির নামে বাচ্চু -সেলিম-আহমদ-মাসুদ-ওমর ওরা কেন জমি বুঝিয়ে দিতে চায়না সেটা এখন অনেক বড় প্রশ্ন ? নিশ্চয়ই এখানে এমন কোন বড় কিন্তু আছ যা গ্রামবাসীর কাছে অজানা! সেলিম মুন্সি গংদের অনৈতিক ভাবে দাতা হওয়ার পরিকল্পনার কথা বুঝতে গ্রামবাসীর ২৫ বছরের উপরে লেগেছে।আমরা মনে করি,খাটরা গ্রামে উথাপিত অনেক কিছুর বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া একান্ত জরুরি ।
ফয়সাল রাজু জানিয়েছেন কিছু বিষয় পরিস্কার হলে তারপর আমরা আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।বাচ্চু গংদের মসজিদ কমিটি নামক কোর কমিটিতে যুক্ত আছেন আমেরিকা প্রবাসী ঐ সেলিম মুন্সি সহ পর্দার আড়ালে থাকা স্হানীয় আরও কয়েকজন, যাদের বিরুদ্ধে অন্যের জমি জবর দখল, মাটি ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণে যুক্ত থাকার অকাট্য অভিযোগ আছে এবং এখনও ঐ মসজিদ কমিটির নির্দেশেই সভাপতি পরিচয়ধারী আহমদ মিয়া জমি জবর দখল করে রেখেছেন।থানা পুলিশ তদন্তে এলে অবশ্যই এর প্রমান পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন আলোচনা সূত্র ধরে দেখা যায় খাটরা গ্রামে অনেক অনিয়ম ও ব্যতয় আছে।তাই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে অনেক কিছুই বের হতে পারে।যেমন হেয়ছিল বিগত সরকারের সময় আমরা সংবাদ প্রকাশে দেখেছি – সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই আমেরিকা-কানাডায় বসবাসের জন্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে বেগম পাড়ায় সম্পত্তি করেছেন।যারা বেগম পারা গড়েছেনে তারা বাংলাদেশের গণমানুষের টাকায় বেগম পারা করেছেন ।তাদের বেশির ভাগই গ্রাম – মফস্বল থেকে উঠে আসা।তাই সফিউর বাচ্চু ও আমেরিকার সেলিম সহ তাদের সহযোগী আহমদ,মাসুদ ওমর ও আরও দু/চারজনকে আমরা সন্দেহের মধ্যেই রাখতে চাই।হিসেবের সুবিধার্থে সূত্র এমন হতে পারে সরকারি কর্মচারী + আমেরিকা প্রবাসী + (আহমদ +মাসুদ+ওমর গং ) = ?
ভূক্তোভূগি পরিবারের সদস্য ফয়সাল রাজুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন আমরা প্রাথমিক অভিযোগ নির্বাহী পরিচালক বরাবর অনিয়মের প্রতিকার জন্য জানাবো এবং সেই সাথে জিএসআইডিপি প্রকল্পের কাউলিবেড়া ইউনিয়নের অধীনে SDW-199 নং সহ আরও কয়েকটি দরপত্রের সূত্র ধরে দূর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করবো।কারন প্রশাসনিক তদন্ত ছাড়া এই জমি বুঝে নেওয়া এখন ঝুঁকি পূর্ণ হবে।আর অভিযোগ যেহেতু দরপত্রে অনিয়ম সহ ভূমি ভরাট, প্রাচীর নির্মাণ, ভূমি জবর দখল ইত্যাদির জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন বরাবর করবো,তাই তাদেরও সকলের উচিত হবে সহযোগিতা করা এবং তদন্তে নিজেদের নির্দোষ প্রমান করা।
তবে,খাটরা গ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম, জবরদখল ও ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সত্যিই গ্রামবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে সমাজে বিভাজন ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।স্থানীয় প্রশাসন ও এলজিআরডি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রকল্পের সকল নথিপত্র, দরপত্র প্রক্রিয়া, ঠিকাদার ও জমির মালিকানা যাচাই সহ জমি ভরাটের লিখিত অনুমতি না থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুন্ন হবে।