সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশের উপর তিন মাসের (জুন-আগস্ট) নিষেধাজ্ঞা চলছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এই উদ্যোগ নিলেও জীবিকা নির্বাহের জন্য বননির্ভর জেলে ও ট্রলার মালিকেরা পড়েছেন চরম সংকটে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ঋণ বাড়ছে দিন দিন।
মুন্সিগঞ্জ জেলে পল্লীর প্রবীণ জেলে নেপাল মণ্ডল (৫০) বলেন, “৩৫ বছর ধরে সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছি। এখন তিন মাস বন বন্ধ থাকায় সমিতির ঋণ নিয়ে খরচ চালাতে হচ্ছে। আবার সেই ঋণ শোধ করতে মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হচ্ছে। এভাবে ঋণের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে।”
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের জিন্নাত আলী বলেন, “আমাদের একমাত্র আয়ের পথ সুন্দরবন। বছরে সরকারিভাবে প্রায় পাঁচ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। তখন মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করে পরিবার চালাতে হয়।”
শুধু জেলেরা নন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলার মালিকরাও। শ্যামনগরের ট্রলার মালিক আব্দুল হালিম জানান, “নিষেধাজ্ঞার সময় তিন মাস আমাদের ট্রলার অকেজো হয়ে পড়ে। পরে চালু করতে গিয়ে মেরামতের খরচ জোগাতে সমিতি ও মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়।”
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি স্টেশনের ২ হাজার ৯শ’ বিএলসি’র মধ্যে মাছ আহরণের জন্য ১১৭০ বিএলসিতে ১২ হাজার ২৩৭টি পাস নিয়ে মাছ ধরতে যায় ৩২ হাজার ৭১১ জন জেলে। একইভাবে ১৭২২ বিএলসিতে ১৯ হাজার ৫৩২টি পাস নিয়ে কাঁকড়া আহরণে যায় ৪৪ হাজার ৩৫০ জন জেলে। এছাড়া ৯১টি ট্রলারের বিএলসিতে ৪৫ হাজার ৫৩৯ জন দেশি এবং ৭০ জন বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ফজলুল হক জানান, “প্রতিবছরের মতো এবারও সুন্দরবন তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময় কোনো জেলে বা পর্যটক প্রবেশ করতে পারেন না। তবে প্রকৃত জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তা হিসেবে দুই কিস্তিতে ৮৬ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে অনেক জেলে অভিযোগ করেছেন, সরকারি সহায়তার চাল সবাই পান না। ফলে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে তারা দিন গুনছেন—কবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে, আবার কবে জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনে ঢুকতে পারবেন।