আইন-আদালত

সাতক্ষীরার শাঁখরা সীমান্তে ডাকাতি, ধৃত ডাকাতকে ছিনিয়ে নিতে গুলি-বিস্ফোরক, আহত-৪

  জিয়াউল ইসলাম জিয়া,বিশেষ প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১১:৪৩:২০

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা সীমান্তবর্তী শাঁখরা গ্রামে ডাকাত দলের তাণ্ডবের ঘটনায় স্থানীয়দের চারজন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ভোররাতে সাবেক মেম্বার সাহেব আলীর বাড়ির সামনে ঘটে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

ডাকাতির সময় ধরা পড়া এক সদস্যকে ছিনিয়ে নিতে এসে ডাকাত দল গুলি ও বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু নিক্ষেপ করে। এতে এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র আতঙ্ক।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, ভোররাতে মোটরসাইকেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় স্থানীয়দের। বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকায় তার চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা সতর্ক ছিলেন। শব্দ শুনে কয়েকজন গ্রামবাসী ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে ফেলেন। আটক ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে সে কেবল গ্রামের নাম মৌতলা বললেও নিজের নাম বলেনি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি স্থানীয়রা পুলিশে জমা দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, এসময় পালিয়ে থাকা অপর দুই ডাকাত ফিরে এসে গুলি ছোড়ে এবং বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু নিক্ষেপ করে তাদের অপর সহযোগীকে ছিনিয়ে নেয়।

গুলিতে ও বিস্ফোরক আঘাতে আহত হন- হাড়দ্দহা গ্রামের বাসিন্দা ওয়াইফাই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন (৩৮), কোমরপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান সাগর (৩০), আব্দুর রউফের স্ত্রী ও গোবিন্দ দাস।

এছাড়া বৈচনা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাঈদ হোসেন (২৪) এর শরীরে গান পাউডার লেগে পুড়ে গেছে। গুরুতর আহত ২জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহিনুর সাংবাদিকদের বলেন- আমরা কয়েকজন মিলে একজনকে ধরার পরই বাকি দুই জন ফিরে আসে। তারা গুলি চালায়, বিস্ফোরক ছোড়ে। গুলির শব্দে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। তারা জোর করে তাদের আটক সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা একটা মোটরসাইকেল রেখে যায় যেটি আমরা পরে পুলিশকে দেই।

প্রত্যক্ষদর্শী বৈচনা গ্রামের আমির হোসেন জানান- রাত আড়াইটার দিকে সাইকেলের শব্দ শুনে বাইরে বের হই। এরপর দেখি ওয়াইফাই ব্যবসায়ী নাসির, সাগরসহ কয়েকজন ডাকাত দলের পিছু নিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই ফেরার পথে ডাকাতরা গুলি ছোড়ে। আমরা ভয় পেয়ে পিছু হটি। ধৃত ডাকাতের মোবাইল ও মোটরসাইকেল চাবি আমাদের হাতেই ছিল, তাই তারা বাইক নিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন- এটি ওয়াইফাই ব্যবসা নিয়ে কোনো বিরোধের ঘটনা নয়। বরং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চুরি-ডাকাতির উপদ্রব ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আমরা নিয়মিত ভয়ে থাকি। টানা কয়েকদিন ধরে ওয়াইফাই লাইনের তার চুরি হচ্ছে। তাই নাসির ভাই পাহারা দিচ্ছিল।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান সকালে বলেন- ওয়াইফাই ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে স্থানীয়দের দাবি- এটি কোনোভাবে ব্যবসায়িক আধিপত্য নয়। এলাকা জুড়ে চোর–ডাকাতের উৎপাত ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসন দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।

ঘটনার পর স্থানীয়রা ও পুলিশ মিলে ডাকাতদের রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল, গান পাউডার, অজ্ঞান করার স্প্রে, লোহার শাবল জাতীয় সরঞ্জাম জব্দ করেছে।

এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন-
শাঁখরা-বৈচনা অঞ্চলে চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে গেছে। রাতে পাহারা ছাড়া ঘুমানো যায় না। এখন আবার এভাবে গুলি-বিস্ফোরকের ঘটনায় আমরা আতঙ্কে আছি।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত টহল জোরদার ও অপরাধচক্রকে ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। নইলে সীমান্তবর্তী এই এলাকায় অপরাধ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

আরও খবর