দেশজুড়ে

সাতক্ষীরায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

  জিয়াউল ইসলাম জিয়া, বিশেষ প্রতিনিধি: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:২০:৫৯

সাতক্ষীরায় সরকার প্রণীত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (এনডিএমপি) ২০২৬-২০৩০ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আয়োজনে ও ব্র্যাক এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় কারিগরি সহায়তা প্রদান করে ইউএন উইমেন ও ইউএনডিপি।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহা. মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ ফারুক হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, জাতীয় পরিকল্পনা শুধু নীতিমালা নয়, এটি স্থানীয় পর্যায়ে জীবনের সুরক্ষা ও উন্নয়নের একটি রূপরেখা। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (NPDM) ২০২৬-২০৩০-এর মূল লক্ষ্য হলো দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এজন্য মাঠপর্যায়ের বাস্তব চাহিদা ও সমস্যা চিহ্নিত করে তা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সাতক্ষীরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জেলার মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য। তাছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলা করা একার কাজ নয়। সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন সংস্থা এবং জনগণ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কর্মশালা স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় জোরদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। কর্মশালায় দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন, নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আলো, চলাচলের জন্য স্প্রীডবোর্ড এবং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে দুর্যোগ সচেতনতা কর্মসূচি চালুর ওপর জোর দেন তিনি।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা একটি দুর্যোগপ্রবণ জেলা। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলের মানুষকে প্রায়শই নানা দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় কেবল সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়; বরং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ, উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি।

সভায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (NPDM) ২০২৬-২০৩০-এর খসড়া উপস্থাপনের পাশাপাশি জেলার বাস্তব চিত্র বিবেচনায় প্রয়োজনীয় মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন উপস্থিত সদস্যরা। এসময় আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা জোরদার, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার, নারী ও শিশু বান্ধব অবকাঠামো স্থাপন, কৃষি ও জীবিকা রক্ষায় সহায়ক কর্মপরিকল্পনা এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

আলোচনা সভায় আরও বলা হয়, দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাসে স্থানীয় বাস্তবতা প্রতিফলন, প্রযুক্তিনির্ভর আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সুরক্ষা ব্যবস্থা, দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন ও টেকসই জীবিকা নিশ্চিতকরণ, দুর্যোগ সহনশীল ও টেকসই রাস্তা, বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। এজন্য সরকারি সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় জোরদার করা গেলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, ইউএন উইমেন এর প্রজেক্ট কনসালটেন্ট রাবেয়া ইমি, ইউএনডিপির প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা সেনাক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার সজীব আহমেদ, নৌপুলিশের এএসপি, র্যাবের এএসপি রিয়াদ, খামারবাড়ী সাতক্ষীরার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম, বিজিবির শামীম হোসেন ও আব্দুর রশিদ, সাতক্ষীরার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী, বিন্দু- নারী উন্নয়ন সংগঠনের পরিচালক জান্নাতুল মাওয়া, উত্তরনের নাজমা আক্তার, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ফরিদা আক্তার বিউটিসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের দুর্যোগ-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির প্রধান খন্দকার গোলাম তৌহীদ।

আরও খবর