টপ টেন

শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পাওয়া ওসিকে প্রত্যাহার

  কাজী আতিক, খুলনা প্রতিনিধি: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৯:১৩:৪০

গত ১৮ আগস্ট জেলার শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ছিলেন খোঁশ মেজাজে। অথচ মাস না পেরোতেই নানান অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়েছে তাঁকেই। তাঁর প্রত্যাহারের খবরে এলাকার মানুষ মিষ্টি বিতরণও করেন। তিনি হলেন-খুলনার কয়রা থানার ওসি জিএম এমদাদুল হক। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্ট্যান্ড রিলিজ ও পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। কয়রা থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাহ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কয়রা থানার ওসির প্রত্যাহারের খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করে পোস্ট করেছেন এলাকার সব শ্রেণি পেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব পোস্টে ওসির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। অনেকেই তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরে পোস্ট করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণও করা হয় ওসির প্রত্যাহারের খবরে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়রা আদালতে ১টি হত্যা মামলাসহ ৪টি রাজনৈতিক মামলা হয়। হত্যা মামলাটি পুলিশকে এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। বাকি মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ। ৫ আগস্টের পর থেকে ডেভিল হান্টসহ আজকের দিন পর্যন্ত পুলিশ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আটক হন। এজাহারে তাদের নাম না থাকলেও আটকের পর পুলিশ তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হতো। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী-সমর্থক এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকায় তারা সহজেই পার পেয়ে যায় বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।

আরো জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর কয়রা থানার পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে জি এম ইমদাদুল হক দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে কয়রায় এলাকার মানুষ বিশেষ করে জায়গা-জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। আইনি সুবিধা পাওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ করেন সালিশের জন্য, কয়রা থানার পুলিশ পরিদর্শক অভিযোগের ভিত্তিতে উভয়পক্ষকে ডেকে সালিশ করেন এবং সালিশের মধ্যখানে ৩ থেকে ৪ দিন সময় দিতেন । এ সময়ে বাদী এবং বিবাদির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করতেন। পরে সুবিচার পাওয়ার জন্য বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষে থানায় ঘোরাঘুরি করেন, পরে আর কোনো সুষ্ঠু সমাধান পান না। মাদক কারবারিদের মাদকসহ ধরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া, ভুক্তভোগী ও সাংবাদিকদের ফোন না ধরা, সেবা নিতে থানায় গেলে অসদাচরণ করা-এসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
গত জুন-জুলাই-আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেওয়া, থানায় দালালদের আধিপত্য বিস্তার- ওসির এমন অনিয়ম ও অসদাচরণের কারণে তার প্রত্যাহার চেয়ে কয়েক মাস আগে কয়রা উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা৷
এসব বিষয় নিয়ে গত ১০ মার্চ একাধিক পত্র-পত্রিকায় ‘কয়রা থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত হয়েছে । গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন তিনি। কয়েকবার তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছিল। নানা ছলচাতুরি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে এতদিন বহাল তবিয়তে ছিলেন। এমনকি বাগিয়ে নেন শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কারও। অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওসি জি এম ইমদাদুল হককে কয়রা থানা থেকে বদলি করে খুলনা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে ইমদাদুল হক জানান, আমি সরকারি চাকরি করি। সরকারের নির্দেশ আমি মানতে বাধ্য। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মতে আমি আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি (তদন্ত) শাহআলম জানান, এখনও নতুন কেউ সংযুক্ত হয়নি। দায়িত্ব নিয়ে আমি আমার কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করেছি। তবে তাকে কী কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে- তিনি সেটা জানেন না বলে জানান ।

আরও খবর