দেশজুড়ে

মামলাজটে খুলনার জেলখানা ঘাট, টোলের টাকা কর্মচারীদের পকেটে

  কাজী আতিক, খুলনা প্রতিনিধি: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ , ৯:৪৮:২৪

খুলনার অত্যন্ত ব্যস্ততম জেলখানা ফেরিঘাট। প্রতিদিন শ’ শ’ ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ইজিবাইক, ভ্যান ও মটর সাইকেল পারাপার হয় এ ঘাট দিয়ে। গেল ৩০ বছর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে আসছে। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে মামলা হওয়ায় ৩০ জুন থেকে টোল আদায় করছে সড়ক বিভাগ নিজেই।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, আদায়ের অর্ধেক টাকাও জমা হচ্ছে না। নানা অজুহাতে কার্য সহকারী মো. আব্দুল ওয়াদুদ ও তার সহযোগিরা এ টাকা আত্মসাৎ করছেন।

জানা গেছে, ১৫ বছর সড়ক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে ধ্রুব এন্টারপ্রাইজ নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে আসছে। বিগত ৩ বছরে ধ্রুব এন্টারপ্রাইজ ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ঘাটটি ইজারা নেয়। গত মার্চ মাসে অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে। চতুর্থতম দরপত্র আহ্বানে ৮৪ লাখ ৪১ টাকায় সেরাদরদাতা হন জহুরুন এন্ড সন্স। এ সময়ে ১৫ বছর ধরে সড়ক বিভাগের কাছ থেকে ঘাট গ্রহণকারী ধ্রুব এন্টারপ্রাইজ নতুন দরদাতাকে ইজারা না দেওয়ার জন্য আদালতে মামলা করে। মামলায় জেলখানা ঘাটটির মালিকানা দাবি করছেন জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উল্লেখ করা হয়। এসময়ে খুলনা জেলা যুগ্ম জজ আদালত সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নতুন ইজারা না দেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়।

সড়ক বিভাগ গত ৩০ বছর ধরে ইজারা দিচ্ছে, সেসব প্রমানাদি জমা দিলে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। সড়ক বিভাগ পুনরায় ৫ম বার দরপত্র আহবান করে। আবারও ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয় জহুরুন এন্ড সন্স। সড়ক বিভাগ ৬ষ্ঠ বার দরপত্র আহবান করে। এবার ৪র্থ ও ৫ম বার সর্বোচ্চ দরদাতা তাদের অনুকূলে ইজারা দেওয়ার দাবিতে এবং পুনরায় দরপত্র আহবান বন্ধ চেয়ে আদালতে মামলা করে। গত ১৭ জুলাই জেলা যুগ্ম জজ আদালত পুনরায় আবারও সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ইজারা কার্যক্রম বন্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তাদের স্বপক্ষে ইজারা কার্যক্রম পরিচালনার সকল প্রমানাদি আদালতে উপস্থাপনের পর আবারও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয়। তবে ওই দরদাতা হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন হলে আবারও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ফলে সড়ক বিভাগ এখন নিজেই টোল আদায় করছে।

তবে সড়ক বিভাগ জানায়, প্রতি সপ্তাহে ফেরিঘাট থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এক থেকে দেড় লাখ টাকার ডিজেল খরচ হচ্ছে ফেরিতে। প্রতিদিন খোরাকি দেওয়া হচ্ছে ১২ হাজার টাকা।
এদিকে সরেজমিনে সোম এবং মঙ্গলবার ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যসহকারী মো. আব্দুল ওয়াদুদ এর নেতৃত্বে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে কাউকে রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবার ১৫/২০ টি ইজিবাইক ও ভ্যান পারাপার হচ্ছে। একাধিক ট্রাক ও বাস পার হলেও একটি রেজিষ্টারে গুটি কয়েক লেখা হচ্ছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোপাল কুমার সাহার নিকট আত্মীয় সৌরভ, সড়ক বিভাগের সুলতান এবং রবিউল ও ফেরির ১৫ স্টাফের যোগসাজসে আদায়ের অর্ধেক টাকা তছরুপ হচ্ছে। তবে মো. আব্দুল ওয়াদুদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভিআইপিদের বহন করতে হয় প্রতিদিন। অনেকে টাকা না দিয়ে চলে যায়। রশিদ দেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনেকে রশিদ নিতে চায় না।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোপাল কুমার সাহা বলেন, সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা জমা হচ্ছে। তবে তিনি জমাকৃত কোনো ডকুমেন্টস দিতে অস্বীকার করেন।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান বলেন, রশিদ দিয়ে টোল নেওয়ার কথা। নিজেরা আদায় করায় সরকারের মোটা অংকের ক্ষতি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, মামলাজটে খুলনা জেলখানা ঘাটের ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। নিজেরা আদায় করায় বছরে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা ক্ষতি হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য ঘাট ইজারায় ১০ম বারও দরপত্র আহবান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ম কলের সর্বোচ্চ দরদাতা অন্যায়ভাবে ঘাটের ইজারা চাচ্ছে। যেটি দেওয়ার নিয়ম নেই। আদায়ের টাকা ঠিকমত জমা না হলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আরও খবর