মাগুরা প্রতিনিধিঃ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:৪৭:৪৬
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গণপিটুনিতে ইসরাফিল (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলাকে ঘিরে গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ভোর রাতে উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে চুরি করে পালিয়ে নিজ গৃহে লুকিয়ে অবস্থান করলে বিক্ষুব্ধ জনতা ইসরাফিলকে আটক করে। এ সময় গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত ইসরাফিল জাঙ্গালিয়া গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মহম্মদপুর থানা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে এবং তিনি ৫০ বারেরও বেশি কারাভোগ করেছেন। একাধিকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পাশাপাশি অতীতে গণপিটুনিরও শিকার হয়েছিলেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী মো. আবু আহসান বলেন,
“গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ইসরাফিলকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও মৃত ইসরাফিলের কোন স্বজনদেরকে পাওয়া যায়নি পাশে। লাশটি পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বলেন,
“সংবাদ পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসরাফিল মারা যান। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা মর্গে পাঠানো হয় এবং ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এদিকে নিহত ইসরাফিলের ভাই আবিদ ২৮ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মহম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে এই মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ— অনেক আসামি ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না। এমনকি একজন আসামি প্রায় ২০ দিন আগে থেকেই শ্রীপুর উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তাই এই মামলাকে তারা “মামলা বাণিজ্য” এবং “ব্যক্তিগত শত্রুতার জের” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে জাঙ্গালিয়া গ্রামে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুসল্লী, মোল্যা, জমাদ্দার, শেখ, বিশ্বাস, মালো, শিকদার, তেওয়ারি পরিবারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাঙ্গালিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তানজীর রহমান (সোহাগ) কে সভাপতি মনোনীত করা হয়। তিনি বলেন—
“এই মামলা এবং ভবিষ্যতে যেকোন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব এবং এ ধরনের কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আগামিতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবো । এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে পাশে থাকার অনুরোধ জানাই।”
গণপিটুনিতে ইসরাফিলের মৃত্যু এবং পরবর্তী মিথ্যা মামলা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। ঘটনাটির ন্যায়সঙ্গত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধে স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।