নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২১ আগস্ট ২০২৫ , ২:২৪:২৯
নরসিংদীর মনোহরদীতে একের পর এক শিক্ষা জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুর রহমান সরকার দোলন প্রথমে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের একটি মাস্টার্স সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই কলেজে সে সময় মাস্টার্স তো দূরের কথা, অনার্স কোর্সই চালু হয়নি।
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের কলেজে মাস্টার্স কখনো চালু হয়নি। ১৯৯৫ সালে তো অনার্সও ছিল না। অনার্স চালু হয়েছে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে। কেউ যদি ওই সময়ে মাস্টার্স সনদ ব্যবহার করে, সেটি নিঃসন্দেহে ভুয়া এবং জাল।
প্রথম সনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর দোলন আবারও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে আরেকটি মাস্টার্স প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে— পরীক্ষার সেশন ১৯৯৩-৯৪, রেজিস্ট্রেশন নং ৬৪৮৮৯, রোল নং ৯৪৮২, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে, ফলাফল প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালের জুন-জুলাইয়ে, আর সনদ ইস্যুর তারিখ ২১ জুলাই ২০০০। কিন্তু শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, এই তথ্যে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে এবং সনদটিও ভুয়া। এই তথ্যই প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো।
এর আগে পূর্বের জাল সনদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বড়চাপা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা উদ্দিন জানান, অভিযুক্ত আমিনুর রহমান সরকার দোলন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ইতোমধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
ভুয়া সনদের জোরে দোলন শুধু বড়চাপা কলেজ নয়, বর্তমানে তিনি আসাদনগর ডিএম ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি, মনোহরদী কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের বিদ্যোৎসাহী, সরদার আছমত আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বিদ্যোৎসাহী এবং খিদিরপুর কলেজের বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দোলনের বিরুদ্ধে শুধু শিক্ষা জালিয়াতিই নয়, মাটি-বালু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ভুয়া সনদ ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ দখল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ধরনের জালিয়াতির বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক ভুয়া সনদ ধরা পড়ার পর আরেকটি ভুয়া সনদ দাখিলের ঘটনায় মনোহরদী এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষাবিদ, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ দাবি করেছেন অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।