আবু রায়হান, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:২২:২৩
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ‘যমুনা ফাউন্ডেশন’ নামক ভুয়া এনজিও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উঠেছে । এ চক্রের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান কে জনগণ আটক করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মোসলেমগঞ্জ বাজারে এমন এক চঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে “যমুনা ফাউন্ডেশন” নামক চক্রের বেশ কয়েকজ সদস্য মোসলেমগঞ্জ বাজার এলাকায় ঢুকে কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিদের টার্গেট করে পরিচিত হয়। পরে সোমবার তারা মোসলেমগঞ্জ বাজারের সুপরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে অফিস আছে নাম করে বিভিন্ন গ্রামে কম সুদে কৃষি, খামার এবং প্রবাসী লোনসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নাম করে বেশ কিছু গ্রাহকদের নিকট থেকে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেই। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় টাকা দেওয়া গ্রাহকেরা তাদের দেওয়া ঠিকানায় আসেন। পরে তারা বাজারের বেশকিছু ব্যক্তিদের ‘যমুনা ফাউন্ডেশন’ নামন এনজিও’র কথা জিজ্ঞাসা করলে স্থানীয়রা এনজিওর বিষয়টি জানতে পারে। সন্দেহ হলে স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ওই এনজিও’র এক ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে ঠিকানা নিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ সেখানে যান। তখন তাদের এনজিও বিষয়ে তথ্য জানাতে চাইলে বারবার প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। এক একপর্যায়ে তারা সকলে কৌশলে পালিয়ে গেলেও ওই ভুয়া এনজিও’র মূলহোতা মোস্তাফিজুর রহমানকে জনগণ আটক করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করেন।
ভুক্তভোগী পার্শ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কচুয়া পানিতলা গ্রামের নিলুফা, লাবনি ও আরফিন বলেন, গত সোমবার “যমুনা ফাউন্ডেশন’ এনজিওর নাম করে তিনজন আমাদের গ্রামে ঢুকে। এবং তারা তিনজন প্রবাসীকে ৩৩ হাজার টাকা সুদে ৩ লক্ষ টাকা লোন দিবে। তাদের কথা শুনে টাকার চাহিদা থাকায় তখনি আমরা ৩ জন ১০ হাজার করে টাকা দেই। মঙ্গলবার সকালে তাদের অফিসে এসে স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলে যথাযথ উত্তর না দিতে পারায় কৌশলে তারা পালিয়ে যায়। অমরা গরীব মানুষ এখন তাদের বিদেশ পাঠাব কি করে?
উদয়পুর ইউনিয়নের বিনইল গ্রামের শফিকুল বলেন, “যমুনা ফাউন্ডেশন” এনজিওর লোকজন মোসলেমগঞ্জ বাজারের রনির বাড়িতে অফিস ভাড়া নিয়েছে বললে তাদের প্রতি আমার আস্থা আসে। তাদের এনজিও সম্পর্কে আমাকে অনেক কিছু বললে আমি তাদের কথায় রাজি হয়ে ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা দেই। পরদিন সকালে এসে শুনি এরা একটি প্রতারক চক্র। আমি এদের শাস্তির দাবি করছি।
এনজিওর বাসার মালিক রনি বলেন, তারা আমার সাথেও প্রতারণা করেছে। ভাড়া নেওয়ার নাম করে তারা আমার কাছে আসে। তখন ভাড়া দেওয়ার কথা হলেও কাগজ পত্র না থাকায় চুক্তিপত্র হয়নি। পরে তাদের প্রধান কর্মকর্তা পরিচয়ে ভাড়া বিষয়ে রাতে আমাকে ফোন দেই মঙ্গলবার তার উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র সম্পন্ন করবে বলে । সকালে এনজিও ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হলে দেখি আটককৃত যে ব্যক্তি আগে আমার এখানে এনজিওর ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলো আর ফোনে প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল মোবাইল নাম্বার যাচাই করে দেখাযাই একই ব্যক্তি। এতে মনে হচ্ছে আটককৃত ব্যক্তিই মূল হোতা।
সাংবাদিক তানজির আহম্মেদ সাকিব বলেন, সকালে পানিতলা থেকে ২ ভ্যান লোক এসে আমাকে যমুনা ফাউন্ডেশন এনজিওর কথা বলে। আমি চিনতে না পারায় এবং আদের কথায় সন্দেহ হওয়ায় তাদের সাথে আমি ওই এনজিও অফিসে যায়। সেখানে তাদের সাথে কথা বললে যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে কৌশলে কয়েকজন পালিয়ে যায় এবং তাদের একজনকে আটক করা সম্ভব হয়।
সাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা যমুনা ফাউন্ডেশন এনজিওর মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার নাম করে আমার গ্রাম থেকে ৪/৫ জনের এনআইডি ও টাকা নিয়েছে এটা আমরা জানতে পেরে অফিসে এসে দেখি এটা একটি ভুয়া এনজিও। পরে সেখানে স্থানীয়দের সহায়তায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজনকে ধরা গেলও বাকিরা সব পালিয়ে যায়।
উদয়পুর ইউপি সদস্য নুরনবী বলেন, ভুয়া একজন এনজিও কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে জানতে পেরে পরিষদে আসি। আটকৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারি তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিদের জেলা গোপালগঞ্জ। এবং সে হাবিব নামের এক জন কর্মকর্তার অধীনে এখানে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান। পরে তার মোবাইল ফোন থেকে তার কর্মকর্তার মোবাইলে ফোন করলে মোবাইল বন্ধ পায়।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কালাই থানার ওসি’র সাথে কথা বললে তিনি ঝামেলাই না গিয়ে আটকৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেখতে বললে আমি ইউএনও মহাদয়ের নিকট যোগাযোগ করি। ইউএনও তাকে তার জিম্মায় দিতে বললে আমি তাকে ইউএনও’র জিম্মায় দিয়ে আসি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, জনগণ যাকে আটক করেছে তাকে টাকা দিয়েছে এমন কাউকে আমি পাইনি এবং কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজিনা । তাকে কেউ টাকা দিয়েছে কিনা এ জন্য আমি ওই ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মাইকিং এর ব্যবস্থা করেছিলাম। তার পরেও কাউকে পাইনি। পরে আটককৃত ব্যক্তি যে উপজেলা থেকে এসেছে সেই উপজেলার ইউএনও কে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। কেউ মামলা করতে রাজি না থাকায় তার পরিবারের লোকজন আসলে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছাড়া হয়েছে।