খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও খোলপেটুয়া নদীজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে এসব নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলছেন। এতে করে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। অথচ প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের দাবি, প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তারা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ সরকারকে রয়্যালটি না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
চাঁদপুরের আলোচিত ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খানের মতো কয়রাতেও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। তাদের প্রশ্ন—“যদি সাধারণ মানুষ নিয়ম ভাঙলে শাস্তি পায়, তবে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা কেন আইনের বাইরে থাকবে?
পরিবেশকর্মীদের মতে, লাগাতার বালু উত্তোলনের ফলে কয়রার নদীগুলো ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদী ভাঙনে প্রতি বছর শত শত পরিবার বসতবাড়ি হারাচ্ছে। একইসাথে মাছসহ নানা জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। নদীপথ সংকুচিত হয়ে পড়ায় নৌচলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “প্রতিনিয়ত নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। রাতে চলতে থাকে এসব কার্যক্রম। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট নৌপথ ও অনুমোদিত জায়গা ছাড়া কোথাও বালু তোলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রমাণ পাওয়া গেলে বালু ব্যবসায়ীদের রয়্যালটি পরিশোধের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
এ অবস্থায় প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই এই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও গোপন স্বার্থের কারণে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নদী ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, “যদি এখনই বালু তোলা বন্ধ না করা হয়, তবে কয়রার গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।”