ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এমপিওভুক্ত হয়। দীর্ঘ ৭০ বছরের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ ত্রিশালের অন্যতম ও নির্ভরযোগ্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও আজও সরকারি বহুতল ভবনের বরাদ্দ পায়নি।
বর্তমানে মাদরাসাটি পাবলিক দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র (কেন্দ্র কোড ৭৮৯, নাম-ত্রিশাল-২ বাগান কেন্দ্র) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় নিয়মিত পাঠদান ও পরীক্ষা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনে কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অবকাঠামো সংকটে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
মাদরাসাটিতে বর্তমানে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন, ক্লাসরুম, মেয়েদের কমনরুম, পৃথক নামাজ ও অজুখানা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা স্যানিটেশন ব্যবস্থায় যা পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হালিমা সুলতানা, ফাইজা খাতুন, হালিমা খাতুন ও মনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমরা মেয়েরা আলাদা কমনরুম বা নামাজের জায়গা পাই না, ছোট্র পরিসরে কমন রুম ও নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ক্লাসরুমও খুব ছোট। তারপরও আমরা কষ্ট করে পড়াশোনা চালাচ্ছি।’ হালকা বৃষ্টিতে পানি পড়ে আর ভারী বর্ষণে ক্লাসরুমে পানি উঠে।
৬ষ্ঠ শ্রেণীর আরও দুই শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, মান সম্পন্ন শিক্ষক থাকলেও অবকাঠামো না থাকায় পড়াশোনায় আনন্দ হারিয়ে ফেলছে তারা। মেয়েদের জন্য আলাদা কমন রুম নেই। অবকাঠামো না থাকায় ক্লাস করতে গিয়েও পরতে হয় বিপাকে।
আরেক পরীক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মাদরাসাটি অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও নেই কোন বহুতল ভবন। টিনসেট আর জরাজীর্ণ হাফ বিল্ডিংয়ে কোন প্রকার চলছে পাঠ দান। সরকার যদি দ্রুত বহুতল ভবন দিতো তাহলে এই সমস্যা থাকত না।’
আলিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আগামী বছর পরীক্ষা শেষ করে চলে যাবো অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হব। তবু চাই আমাদের পরবর্তী ভাই-বোনেরা যেন কষ্টে না পড়ে। বহুতল ভবন জরুরি।’ ‘আমরা সামনের বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবো। কিন্তু ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ঠিকমতো বসার জায়গাও পাওয়া যায় না। এতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।’
আলিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা ও আফিফা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম নেই, যা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে সামনে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়বে আর ফলাফলের মানও আরও ভালো হবে।’
শিক্ষকদের দাবি
মাদরাসার ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করছেন ভালো ফলাফলের জন্য। কিন্তু অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে ভর্তি হতে আসা অনেক শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বহুতল ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পুরনো ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। আবার পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ার কারণে আসন বিন্যাস করতে ভীষণ কষ্ট হয়। তাই আমরা অবিলম্বে বহুতল ভবন, পর্যাপ্ত পাঠদান কক্ষ, আবাসন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ত্রিশাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানটি অনেকবার পরিদর্শন করেছি, পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষ জনকের কারণে বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। মাদরাসাটির অবকাঠামোগত সংকট আমাদের জানা আছে, আমি আশাকরি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বহুতল ভবন বরাদ্ধ দিবেন।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, ‘এটি ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের একমাত্র আলিম মাদরাসা ও পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র। শ্রেণী কক্ষের সংকট ছাড়াও স্যানিটেশন ও সীমানা প্রাচীরও সংস্কার জুরুরী। অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নেব। অন্যান্য সমস্যাগুলোরও সমাধানকল্পে উদ্যোগ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য; ৭০ বছরের ঐতিহ্য গড়ে তোলা বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা আজও আধুনিক অবকাঠামোর ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আশা করছেন দ্রুত সরকারি উদ্যোগে বহুতল ভবন, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে। অন্যথায় অগ্রযাত্রার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে দক্ষিণ ত্রিশালের একমাত্র আলিম মাদরাসাটির।