টপ টেন

নিম্ন মানের উপকরন দিয়ে পাটগ্রামে সড়ক মেরামত অনিয়মের অভিযোগ

  মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ২৩ আগস্ট ২০২৫ , ১১:৪৯:৩০

জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১ হাজার ৮৯০ মিটার চেইনেস সড়ক ও রাস্তা নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসীর দাবি, নির্মাণ কাজে প্রয়োজনীয় উপকরণের (ইট, বালি, সিমেন্ট, রড) সঠিক ব্যবহার করা হয়নি। শর্ত অনুযায়ী কাজ না করে যেনতেনভাবে কাজ করায়, ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৭ শত ৩৭ টাকা ব্যয়ে উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের ললিতারহাট থেকে বোঁচার বাজার পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯০ মিটার চেইনেস সড়ক মেরামত ও সড়কের *পাশ* দিয়ে বৃষ্টি, বন্যা ও পুকুরের ভাঙন রোধে গাইড ওয়াল নির্মাণ রাস্তা সংস্কার ও নতুন করে সলিং, কার্পেটিং কাজের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি।

কিন্তু শুরু থেকেই নির্মাণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা। গাইড ওয়ালে নিম্নমানের ইট, বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার করা। রাস্তা নির্মাণে নির্ধারিত পুরুত্ব ও গভীরতা বজায় রাখা হয়নি। পিচ ঢালাইয়ের আগে সঠিকভাবে রেজিং প্রস্তুত না করেই কাজ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে এ ধরণের কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিয়াম অ্যান্ড সাজ্জাদ ট্রেডার্সের লোকজনেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইট গুলো ভাঙা ভালো নয়। বালুর পরিমাণ বেশি আর সিমেন্ট প্রয়োজনের তুলনায় কম দিয়ে কাজ করা হয়েছে। অনেক বলেছি, কেউ শোনেন নি, উল্টো হুমকি মূলক কথা বলে। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোক ছিল, তাঁরা অনিয়ম দেখেও কিছু বলেন না। আমরা নিশ্চিত কয়েকমাসের মধ্যে দেয়াল ও রাস্তা ভেঙে যাবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, শেষের দিকে রাস্তা ও গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ। নির্মাণ কাজ দেখভালের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর প্রতিনিধি আহসান হাবীব উপস্থিত থাকলেও তাঁর সামনেই নিম্নমানের কাজ করছে ঠিকাদারের নির্মাণশ্রমিকেরা। বেশি বালু, ও কম সিমেন্টের মিশ্রণ দিয়ে গাইড ওয়ালে নিম্নমানের ইট গাঁথুনি দেওয়া হচ্ছে। কিছু দূর পর পর পুরোনো ভাঙা পিলার (খুঁটি) বসিয়ে চলছে এ গাঁথুনি। এলজিইডির উদাসীন তদারকিতে ঠিকাদারের নির্মাণ কাজের মান নিশ্চিত করা যায়নি।

এ ব্যাপারে আহসান হাবীব বলেন, ‘সবসময় কাজ ভালো করে করার জন্য বলা হয়। আর কিছু বলতে পারবো না।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিয়াম অ্যান্ড সাজ্জাদ ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মাইদুল ইসলামকে ‘নির্মাণ কাজে প্রয়োজনীয় উপকরণ ইট, বালি, সিমেন্ট, রড সঠিকভাবে কেনো ব্যবহার করা হচ্ছেনা। শ্রমিকেরা যাচ্ছেতাই কাজ করছে; জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ ভালো হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে সরাসরি ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করুন।’

ঠিকাদার শাহাদত হোসেন বলেন, ‘কাজ নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। কোথায় সমস্যা বলেন? উপজেলার লোকজন আছে, তাঁরা কাজ বুঝে নেবে। খারাপ কাজ করার কোনো সুযোগ নাই।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম রিফাত (সদ্য বদলি) কাজ দেখতে উদাসীনতার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘কাজ দেখতে কয়েকবার গিয়েছিলাম। কাজের মান কিছুটা খারাপ ছিলো, স্ট্যান্ডার্ড না। কয়েকটা পিলার ভেঙে দেখেছি সহজে ভাঙছে, এরকম কয়েকটা রিজেক্ট করেছি। পুরাতন পিলার ব্যবহার করার অপশন নাই। রেজিংয়ে কিছু পুরাতন ইট ব্যবহার করেছিল, আমরা বলার পরে সেগুলো সরায়ে নিয়েছিল।’

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘কাজের গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখার পর যদি তা ঠিক না থাকে তাহলে অবশিষ্ট বিল (কাজের টাকা) দেওয়া বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও খবর