১৬ বছর সুখে ছিলেন ময়না বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর সামাজিক ও মানসিক দিক থেকে একা হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের চাপ এবং সন্তানদের সুখের কথা ভেবে দেবর গোলাম রসুলের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসলেন ময়না। বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে গোলাম রসুল চাকরির নামে প্রতারণা করে ময়নার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ষড়যন্ত্রের জালে ফেলে ময়নাকে তালাক দেয়া হয়। ন্যায় বিচারের আশায় খুলনার বিজ্ঞ আদালতে গত ৩১ জুলাই গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক মামলা করেন ময়না বেগম। পিতৃহারা দুই শিশু সন্তান নিয়ে মৃত স্বামীর সংসারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে সে।
ঘটনাটি ডুমুরিয়া উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের। তবে এনিয়ে ময়নার বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক ভাবে কালিকাপুর গ্রামের মোঃ আলী হোসেন জোদ্দারের ছেলে গোলাম মোস্তফার সাথে একই এলাকার নজরুল মোড়লের কন্যা ময়নার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের আলামিন (৭) ও আবু হুরাইরা (৪) নামের দুই সন্তান রয়েছে। গোলাম মোস্তফা একজন অত্যন্ত পরিশ্রমী সফল কৃষক ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। গোটা সংসারটাও সামলাতেন তিনি। ২৪ লাখ টাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৮ বিঘা কৃষি সম্পত্তি বন্ধক রেখেছিলেন তিনি। ভালোবাসা, যত্ন এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্ত্রীকে অনেক সুখে রেখেছিলেন। ২০২৪ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় মোস্তফা। এরপর স্বামীর সংসারে টিকে থাকা বিধবা স্ত্রীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বিধবা নারীর জীবনযাপন নিয়ে পরিবার থেকে কটু মন্তব্য করা হয়।
এরপর পরিবারের নানামুখী চাপ ও সন্তানদের সুখের কথা ভেবে স্বামীর আপন ছোট ভাই গোলাম রসুল জোদ্দারে (৪৪)’র সাথে গত ৬ জানুয়ারী ২০২৫ বিয়ে হয় ময়নার। বিয়ের পর চাকরির কথা বলে ময়নার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয় রসুল। যে টাকা ময়না তার বাবার বাড়ি থেকে ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগী বিক্রিসহ বিভিন্নভাবে জোগাড় করে। এরপর ময়নাকে তাড়ানোর জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করতে থাকে। একপর্যায়ে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে ময়নার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়।
এ বিষয়ে গোলাম রব্বানি জানায়, “বড় ভাই মারা যাওয়ার পর ময়না ভাবিকে ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। পাড়ার এক ছেলের সাথে তার পরকীয়া রয়েছে। কিছুদিন আগে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে তারা ধরাও পড়ে। যে কারণে ছোট ভাই তাকে তালাক দিয়েছে। আমরা দুই ভাইপোকে সব ধরনের প্রাপ্য বুঝে দিবো। কিন্তু তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী কীভাবে স্বামীর সংসারে থাকবে?”
এদিকে ভুক্তভোগী ময়না বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিয়ের কোন ইচ্ছা ছিল না। সমাজে তাকে নিয়ে তখন নানা কুৎসা রটাচ্ছিল। একপর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চাপে স্বামীর ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি।
ময়না বলছে, “তার স্বামীর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই মূলত তাকে বিয়ে করা হয়। গোলাম রসুল চাকরির কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে।
টাকা না দিলে ময়নাকে মারধর করা হতো। মিথ্যা পরকীয়ার অভিযোগে গত ২০ জুলাই নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ময়নাকে তালাক দিয়েছে। এমনকি ময়নাসহ তার দুই সন্তানকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছে ওরা। পিতৃহারা দুই সন্তান নিয়ে মৃত স্বামীর সংসারে অসহায় দিন কাটছে তার। রান্না করতেও দিচ্ছে না ওরা। এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।
স্থানীয় শরাফপুর ইউপি’র ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মাহাবুর রহমান বলেন, “ময়না ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। তার মৃত স্বামীর অধিকার বঞ্চিত করার লক্ষ্যে পুনরায় ছোট দেবরের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এই গভীর চক্রান্তের ফাঁদে পড়ে বিপাকে এখন ময়না। বর্তমান ময়নার বাবার পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যে চরম বিরোধ চলছে।”