কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মা শাহজাদী ও তার ১২ দিন বয়সী শিশু মেয়েকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়েছে। রোববার রাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের দু’জনকে হাসপাতালে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে পৃথক কেবিনে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মা শাহজাদী এবং তার মা নার্গিস বেগমের জামিন আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করেন।
আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে আদালতের আদেশের অনুলিপি তুলতে পারলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। মূলত মামলায় মানব পাচারের মামলায় নিম্ন আদালতে জামিনের এখতিয়ার নেই। মঙ্গলবার মহানগর আদালতে বাদীর আবেদনও তুলে ধরব। আশা করি জামিন হয়ে যাবে।
জানা যায়, বাগেরহাটের রামপালের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহজাদীর সংসারে চারটি মেয়ে শিশু রয়েছে। গতবছর আবার গর্ভবর্তী হন শাহজাদী। অনাগত সন্তান যেন ছেলে হয়, সেজন্য স্বামী ও পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশার চাপ ছিল। মেয়ে হলে বিবাহ বিচ্ছেদের হুমকিও ছিল। এমন অবস্থায় ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সিজারিয়ানের মাধ্যমে মেয়ে শিশু জন্ম দেন শাহজাদী। সংবাদ শুনেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন সিরাজুল। পরের দিনগুলোতে তিনি আর হাসপাতালে যাননি, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেননি। মেয়ে শিশুর জন্ম দেওয়ার নানামুখী চাপে দিশেহারা শাহজাদী ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে একই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া আরেক রোগীর ছেলে সন্তান চুরি করেন।
নবজাতক চুরির সংবাদে তোলপাড় তৈরি হয়। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতা ওই দিন সন্ধ্যায় ছেলে নবজাতকটি উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমকে। এ ঘটনায় শাহজাদী ও তার মাকে আসামি করে মানব পাচার আইনে মামলা করেন চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুমন।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নার্গিস বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ৬ দিন ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। শাহজাদী একটি কক্ষে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। সঙ্গে ছিল তার শিশু মেয়ে। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মায়ের কোলে চড়ে কারাগারে যায় ১২ দিনের শিশুটিও।
খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, রাতে শাহজাদী নামের নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া শিশুটির বয়স মাত্র ১২ দিন। কারাগারে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই তাদের হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়।
চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুমন বলেন, আমার ছেলে ও শাহজাদী আপার মেয়ে একই দিন জন্ম নিয়েছে। আমার বাচ্চা জন্মানোর পর বুকের দুধ পাচ্ছিল না। তখন শাহজাদী আপা তার মেয়ে ও আমার ছেলেকে একসঙ্গে দুধ খাইয়েছে। চুরির সংবাদে আমি দিশেহারা হয়ে মামলা করি। এখন বুঝতে পারছি নানামুখী চাপ সামলাতে না পেরে ভুল করেছি। আমি এই মামলা চালাতে চাই না। উকিলকে এই কথা বলেছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা পুলিশের এস আই শাহীন কবির বলেন, বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারাধীন। সিদ্ধান্ত আদালত থেকেই আসতে হবে।