মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ২৩ আগস্ট ২০২৫ , ১০:৫৬:০৬
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম জেলার ১৬ টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা। থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রচারও। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম ১২ (পটিয়া ) এ আসনে দলটির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে। এতে দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মাঠে নেমেছেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। জানা যায় গত পনের বছর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা আ.লীগের মামলা-হামলার ভয়ে নিষ্ক্রিয় থাকলেও ২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দল দুটির নেতাকর্মীরা এখন মাঠে সক্রিয়। বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী ডা. ফরিদুল আলমকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করছে দলটি।
১৯৯১ সাল পটিয়া আসনে বিএনপির শাহনেওয়াজ চৌধুরী মন্টু আ.লীগ প্রার্থী এসএম ইউসুফকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মন্টুর ইন্তেকালের পর বিএনপির গাজী শাহজাহান জুয়েল ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আ.লীগ প্রার্থী জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিনকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জুয়েলকে হারিয়ে আ.লীগ প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০১৪ এক তরফা নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে রাতের ভোটের কারচুপির নির্বাচনে সামশুল হককে জয়ী ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে বিতর্কিত ডামি নির্বাচনে বিজয়ী হন দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আ.লীগের সাবেক এমপি সামশুল হক।তবে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল। ২০১৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি এনামুল হক এনাম, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক ও পটিয়া উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিচ মিয়া, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গুম থেকে মুক্তি পাওয়া সৈয়দ সাদাত আহমদ এবং চট্টগ্রাম মহানগরী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ। আ.লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ বলয়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাঠে-ময়দানে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই দলের কর্মসূচি পালন করছেন পৃথক পৃথকভাবে । নেতারা প্রত্যেকেই আলাদা দলের কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করায় বিএনপিতে বাড়ছে গ্রুপিং।বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল বলেন, দল আমাকে অতীতে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছে এবং পটিয়ার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে দুবার নির্বাচিত করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে আমি পটিয়ার উন্নয়নে সার্বিক ভূমিকা রাখব। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এনামুল হক এনাম বলেন, বিগত ১৫ বছর দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের আগলিয়ে রেখেছি নিজের সন্তানের মতো। ১৬ মামলার আসামি হয়ে পাঁচ বার জেলে গেছি। আবার রাজপথেও সংগ্রাম করেছি। ২০১৮ সালে কারচুপি করে, কর্মীদের নির্যাতন, হত্যা করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে আ.লীগ। তবুও দমে যাইনি। তাদের কেউ এতদিন আ.লীগের সঙ্গে আপস করে চলেছে, কেউ বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করেছে। আমার বিশ্বাস দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকেই মনোনয়ন দেবেন। আমি মনোনয়ন পেলে দলের জন্য এবং পটিয়াবাসীর জন্য নিজেকে উজাড় করে দেব।দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রবীণ নেতা ইদ্রিস মিয়া বলেন, আ.লীগ আমলে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। পটিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মতো তৃণমূল থেকে উঠে আসা বয়স্ক ও প্রবীণ নেতা আর নেই। দলের মুরুব্বি হিসেবে মনোনয়ন না পেলেও যিনি মনোনয়ন পাবেন তাকে বিজয়ী করতে কাজ করব।চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ বলেন, রাজনীতিকদের প্রত্যাশা থাকে দলের মনোনয়ন পাওয়া। এটা একদিকে একটা স্বীকৃতি, অপরদিকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ। গত ১৫ বছরে হয় জেলে ছিলাম, নয়তো কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় এবং আত্মগোপনে কাটিয়েছি। এখন প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ এসেছে বলেই এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করছি। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস মনোনয়ন পেলে দলের চেয়ারপারসনকে পটিয়া আসন উপহার দিতে পারব।এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল নতুনদের মনোনয়ন দিবে বলে মনে করেন তিনি ।জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে পটিয়াকে জেলা ঘোষণার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সম্প্রতি পটিয়ায় জনসভা করে দলের প্রার্থী হিসেবে শল্য চিকিৎসক ডা. এমদাদুল হাসানের নাম ঘোষণা করেছে। ডা. এমদাদুল হাসান পটিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দলের বাইরে একজন তরুণ ও সজ্জন ডা. হিসেবে পরিচিত।